close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

বরগুনার গ্রামাঞ্চলের ৭৬ ভাগ বাড়িতে এডিসের লার্ভা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বরগুনার গ্রামে ৭৬% বাড়িতে মিলেছে এডিস লার্ভা। নতুন সেরোটাইপ-৩ ডেঙ্গুর বিস্তার আরও ভয়াবহ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই না থামলে বিপর্যয় অনিবার্য।..

ডেঙ্গুর ছোবল এবার নীরবেই গ্রাস করছে দেশের দক্ষিণাঞ্চল। বরগুনা জেলার গ্রামাঞ্চলে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে আইইডিসিআরের জরিপ বলছে—গ্রামের ৭৬ শতাংশ বাড়িতে পাওয়া গেছে ডেঙ্গু বাহক এডিস মশার লার্ভা! শহরাঞ্চলেও পরিস্থিতি ভয়াবহ। এই জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।

গতকাল (বুধবার) সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) প্রকাশ করেছে এক বিস্ফোরক তথ্য। জরিপে দেখা গেছে, বরগুনা পৌর এলাকায় ৩১ শতাংশ, আর গ্রামাঞ্চলে ৭৬ শতাংশ বাড়িতে রয়েছে এডিস মশার লার্ভা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে বরগুনায় ডেঙ্গু মহামারির রূপ নিতে পারে।

গ্রামের মানুষ সুপেয় পানির সংকটে পড়ে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করেন। সেই পানি রাখা হয় প্লাস্টিকের ড্রামে বা পাত্রে। ঢেকে রাখা হয় কাপড় দিয়ে—যেখানে সহজেই জন্ম নেয় এডিসের লার্ভা। আইইডিসিআরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. রত্না দাশ জানান, এসব কাপড়ে বিশাল হারে লার্ভা মিলেছে।

বরগুনার বেশিরভাগ পরিবারেই পানি জমিয়ে রাখার এই অভ্যাস বহু পুরনো। অনেকে পুরোনো পানি ফেলে না দিয়ে নতুন পানি যুক্ত করেন—ফলে পানির পাত্র হয় এডিসের প্রজননক্ষেত্র। এই পরিস্থিতিই ডেঙ্গুর বিস্তার ভয়াবহ করে তুলেছে।

ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দেশে সেরোটাইপ-২ এর আধিপত্য ছিল। কিন্তু আইইডিসিআরের জরিপে এবার বরগুনায় সেরোটাইপ-৩ এর উপস্থিতি বেশি পাওয়া গেছে।

ডা. তারিকুল ইসলাম, ডেঙ্গু জরিপ দলের প্রধান জানান, বরগুনায় নেওয়া ৪৩টি নমুনার বেশিরভাগেই এই নতুন সেরোটাইপ পাওয়া গেছে। নতুন সেরোটাইপে মানুষের শরীর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি, ফলে সংক্রমণ হচ্ছে দ্রুত এবং জটিলতার আশঙ্কাও বেশি।

জরিপে দেখা গেছে, বরগুনা পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি সংকট ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে—যেখানে বিআই সূচক (ব্রুটো ইনডেক্স) যথাক্রমে ১৫৩ ও ১৩৩। অথচ ২০ হলেই তা বিপজ্জনক ধরা হয়!

গ্রামাঞ্চলে এই সূচক পৌঁছেছে ১৬৩-এ—যা রীতিমতো আতঙ্কের নামান্তর। জরিপে অংশ নেওয়া ১৮৪টি বাড়ির মধ্যে, শহরের ৪৩টি ও গ্রামের ৩৫টিতে সরাসরি লার্ভা পাওয়া গেছে।

গতকাল একদিনেই দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩২৬ জন। এর মধ্যে ৬৫ জনই বরগুনার—অর্থাৎ ২০ শতাংশ। যা একটি জেলার জন্য খুবই আশঙ্কাজনক।

গত বছর বরগুনা ছিল দেশের পঞ্চম সর্বোচ্চ ডেঙ্গু আক্রান্ত জেলা। সেবার আড়াই হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন। এবার সংক্রমণের গতি দেখে সেই সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে সবকিছু।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, “বরগুনায় এডিসের বিস্তার ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। যদিও এটা শুধু বরগুনার সমস্যা নয়—দেশের অন্যান্য এলাকাতেও এমন প্রবণতা থাকতে পারে।”

তিনি আরও জানান, যখন নতুন সেরোটাইপ ছড়ায়, তখন শুধু আক্রান্তের হারই বাড়ে না, রোগীর শারীরিক জটিলতাও বাড়ে। বরগুনার সেরোটাইপ-৩–এর প্রাধান্য এই জেলার পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরীন জানিয়েছেন, “ডেঙ্গু আক্রান্ত বাড়ছে, কিন্তু হাসপাতালে শয্যা, চিকিৎসক, নার্স—সব কিছু সীমিত। তাই রোগের উৎসে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। এখনই যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।”

চিকুনগুনিয়া বা জিকার কোনো ভাইরাস না থাকলেও, শুধুমাত্র ডেঙ্গুই এই মুহূর্তে বরগুনার জন্য বিশাল স্বাস্থ্যঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বরগুনা এখন ডেঙ্গুর হটস্পট। সরকার ও জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এখনই সচেতন না হলে সামনে অপেক্ষা করছে আরও বড় সংকট।

Walang nakitang komento


News Card Generator