ছাত্ররাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম কাউন্সিল নির্বাচন। দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি শেষে অবশেষে ঘোষণা করা হলো চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা। সোমবার, ২৩ জুন রাতে সংগঠনটির নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মুখপাত্র — এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদে একাধিক প্রার্থী লড়ছেন। প্রতিটি পদের জন্যই প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝড় বইছে।
নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার লুৎফর রহমান, কমিশনার ওয়াহিদুজ্জামান এবং কমিশনার মুহাম্মদ রাকিব — এই তিনজনের যৌথ স্বাক্ষরে তালিকাটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২৪ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই বহুল প্রতীক্ষিত নির্বাচন। ছাত্রদের মধ্যে এরই মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে।
সভাপতি পদে লড়ছেন দু’জন পরিচিত মুখ —
-
মো. রশিদুল ইসলাম (রিফাত রশীদ) : তিনি সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য।
-
মো. জাকির হোসেন (মঞ্জু) : সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এই পদে যেহেতু কেবল দু’জন প্রার্থী আছেন, তাই ভোটের লড়াই বেশ হাড্ডাহাড্ডি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন তিনজন শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী —
-
ইব্রাহীম নিরব : কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য।
-
হাসান ইনাম : ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ বিষয়ক বিশেষ সেলের সম্পাদক।
-
মো. ইব্রাহিম হোসেন (মুন্না) : ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক।
এই পদে প্রার্থীদের কার্যক্রম, জনপ্রিয়তা এবং সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা নিয়ে ইতোমধ্যেই বিতর্ক ও আলোচনার ঝড় বইছে সংগঠনের অভ্যন্তরে।
তিনজন প্রার্থী সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন:
-
মুঈনুল ইসলাম : কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য।
-
তাসনিম আহমাদ : খুলনা জেলা শাখার আহ্বায়ক।
-
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন : কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শাখার সদস্য সচিব।
এদের মধ্যে কেউ দীর্ঘদিনের নেতৃত্বে থাকলেও, কেউ আবার বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে জনপ্রিয় মুখ হিসেবে পরিচিত।
মুখপাত্র পদের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন —
-
সিনথিয়া জাহীন আয়েশা : কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য।
-
নুপুর আক্তার নোভা : ঢাকা মহানগর শাখার বর্তমান মুখপাত্র।
-
মো. লিখন হোসেন : সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ শাখার আহ্বায়ক।
তিনজনেই মিডিয়ায় সাবলীল এবং সংগঠনের বার্তা পৌঁছে দিতে দক্ষ বলে পরিচিত।
এই নির্বাচন শুধু নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার প্রশ্নই নয়, বরং এটি হবে সংগঠনের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনার নির্ধারক। এটি প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তাই নেতৃত্বের ভার কাদের কাঁধে যাবে — তা নিয়ে সকলের মধ্যেই আগ্রহ তুঙ্গে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মূলত সাম্যবাদী ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা একটি সংগঠন। এর ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নির্ভর করছে এই কাউন্সিল নির্বাচন এবং এর ফলাফলের ওপর।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্বাচন হবে অনলাইন এবং অফলাইন উভয় মাধ্যমেই। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, নির্বাচনটি হবে উদাহরণস্বরূপ স্বচ্ছ ও সহিংসতামুক্ত।
এই প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাউন্সিল নির্বাচন ছাত্ররাজনীতিতে নতুন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছে। তরুণ নেতৃত্বের এই লড়াই শুধু পদের নয়, বরং আদর্শিক অবস্থান, সাংগঠনিক কৌশল এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি হিসেবে মূল্যায়িত হবে।