বন্দরে দোকান থেকে ডেকে নিয়ে একজনকে কু পি য়ে হ ত্যা। হাসপাতাল থেকে লাশ ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ....

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নারায়ণগঞ্জের বন্দরে রাজনৈতিক আধিপত্য ও মাদক নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ সংঘর্ষের রেশ ধরে কুদ্দুস নামে এক ব্যক্তিকে দোকান থেকে ডেকে নিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। এরপরে হাসপাতাল থেকে ল..

রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, মাদক নিয়ন্ত্রণ ও বাসস্ট্যান্ড দখলের জের ধরে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড। শনিবার রাত ৮টার দিকে শাহী মসজিদ হাফেজিবাগ এলাকায় চা দোকানে ডেকে নিয়ে আবদুল কুদ্দুস (৫৫) নামে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীরা। নিহত কুদ্দুস ছিলেন স্থানীয় রনি-জাফর গ্রুপের সদস্য পারভেজের বাবা।

স্থানীয় বাসিন্দা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত কয়েকদিন ধরেই দুইটি রাজনৈতিক গ্রুপ—বাবু-মেহেদি ও রনি-জাফর—এর মধ্যে চলছিল উত্তেজনা। মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি এবং অটোরিকশা স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে বিবাদ এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে শুক্রবার রাতে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ৮ জন গুরুতর আহত হন।

বন্দরে স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকার শনিবার দুপুরে উভয়পক্ষকে ডেকে এনে একটি সালিশি বৈঠকে বসান। কিন্তু দীর্ঘ আলোচনার পরেও সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার রাতে প্রতিশোধের নেশায় উত্তপ্ত রনি-জাফর গ্রুপের প্রতিপক্ষ বাবু-মেহেদি গোষ্ঠীর কয়েকজন সদস্য আবদুল কুদ্দুসকে চায়ের দোকানে ডেকে নেয়। সেখানেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার উপর একের পর এক আঘাত চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

ঘটনার পর আহত অবস্থায় কুদ্দুসকে দ্রুত বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর পরপরই পরিস্থিতি আরও জটিল রূপ নেয়, যখন অভিযোগ উঠে—কুদ্দুসের মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। যদিও পুলিশ বলছে, নিহতের স্বজনরাই লাশ বাড়ি নিয়ে গেছেন।

হত্যাকাণ্ডের পর পুরো হাফেজিবাগ এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাস্তায় সাধারণ মানুষ চলাচল বন্ধ করে দেয়। রাত ১১টার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এলাকাবাসীর বক্তব্যে উঠে এসেছে, এই হত্যাকাণ্ড নিছক ব্যক্তিগত শত্রুতা নয়—বরং এটি ছিল একটি সংগঠিত রাজনৈতিক ও অপরাধচক্রের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের বহিঃপ্রকাশ। জাফর নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাউসারের ঘনিষ্ঠ এবং দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দাবি, বাবু-মেহেদি গ্রুপ আশার নাম ব্যবহার করে এলাকায় চাঁদাবাজি ও মাদকের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। তিনি তা নিয়ে প্রতিবাদ করায় বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকিও পেয়েছেন।

তার মতে, পারভেজের বাবা কুদ্দুসকে হত্যা করার উদ্দেশ্য ছিল পুরো পরিবার ও গ্রুপকে ভয় দেখানো এবং এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখা।

বন্দর থানার ওসি (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, “পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি, তবে পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে—তদন্ত চলছে এবং জড়িতদের শনাক্তে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এ ঘটনার পর সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে। স্থানীয়দের দাবি, এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করতে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে এর রক্তাক্ত ধারা আরও বিস্তৃত হতে পারে।

No comments found


News Card Generator