রাজশাহীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া একটি বিতর্কিত পোস্টকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। পোস্টটিতে ছাত্রদলের এক কর্মী দাবি করেন, “শিবির মারা জায়েজ ছিল, জায়েজ আছে, জায়েজ থাকবে।” এই বক্তব্যকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সরাসরি হুমকি ও সহিংস উস্কানি হিসেবে চিহ্নিত করে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
বিতর্কিত এই মন্তব্যটি করেছেন আহনাফ তাহমিদ অর্জন (২৩) নামের এক কলেজছাত্র। তিনি রাজশাহী কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং একইসঙ্গে ছাত্রদলের রাজশাহী কলেজ শাখার একজন কর্মী হিসেবে পরিচিত। অর্জনের স্থায়ী ঠিকানা রাজশাহী নগরের ভাটাপাড়া এলাকায়, তার বাবার নাম আব্দুস সাত্তার।
ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে বোয়ালিয়া থানায় এই জিডি দায়ের করেন নগর শাখার সভাপতি মোশফিকুর রহমান। তিনি অভিযোগ করেন, আহনাফ তাহমিদ ফেসবুকে এমন একটি পোস্ট দিয়েছেন, যা সরাসরি হুমকির পর্যায়ে পড়ে এবং এর মাধ্যমে শিবির নেতাকর্মীদের প্রাণনাশের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
পোস্টে বলা হয়:
“শিবির মারা জায়েজ ছিল, জায়েজ আছে, জায়েজ থাকবে। এদের বেসিক হিউম্যান রাইটস থাকাও উচিত কি না, সেটা নিয়ে ডিবেট হওয়া উচিত।”
এই বক্তব্য ছাত্রশিবির নেতাদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগের জন্ম দেয়। তারা মনে করেন, এটি রাজনৈতিক বিদ্বেষ ছড়ানোর পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট একটি দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়ার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচেষ্টা।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ আবির বলেন, “ছেলেটিকে আমি খুব একটা চিনি না। শুধু জানি, সে আমাদের সংগঠনের কর্মী। তার এমন বক্তব্য দলীয় নীতিমালার বাইরে। ফেসবুকে কী বলেছে, সেটা খতিয়ে দেখে মহানগর ছাত্রদল প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।”
এদিকে, পুলিশের পক্ষ থেকেও এই ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। রাজশাহী মহানগর বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, “জিডি গ্রহণ করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, সামাজিক মাধ্যমে রাজনৈতিক মন্তব্য করা এখন অনেকটাই সাধারণ হলেও, তা যদি উসকানিমূলক বা সহিংসতা প্ররোচিত হয়, তবে তা অবশ্যই আইনগত বিচারের আওতায় আসা উচিত।
তাদের মতে, “মতপ্রকাশের স্বাধীনতা” একটি মৌলিক অধিকার হলেও, কারও জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লে তা আর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকে না, বরং তা হয়ে দাঁড়ায় অপরাধমূলক আচরণ।
এ ঘটনায় ছাত্রদল বা ছাত্রশিবির—দুই পক্ষের ভেতরেই চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, সে জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকেও সতর্ক থাকতে হবে বলে মন্তব্য করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাপুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ অন্যান্য ফৌজদারি ধারায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



















