ঢাকা, ৩০ জুন — ৪৪তম বিসিএসের পদসংখ্যা বৃদ্ধির দাবিতে রমনা পার্ক থেকে যমুনা নদীর তীরের দিকে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা করার চেষ্টায় বাধা দেয় পুলিশ। সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে রমনা পার্কের ‘অরুণোদয়’ গেট দিয়ে বের হয়ে আন্দোলনকারীরা রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করেন। তবে পুলিশের তৎপরতায় তারা দ্রুত সরিয়ে দেয়া হয়।
রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম জানান, আন্দোলনকারীরা ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করেছেন এবং এই ধরনের আইন ভঙ্গকারী কর্মসূচি অনুমোদিত নয়। তাই তাদের সরিয়ে দিতে পুলিশ বাধ্য হয়।
অন্যদিকে, আন্দোলনকারীরা জানাচ্ছেন, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য কোনো সহযোগিতা পাননি। তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
বিসিএস পরীক্ষার ফলাফলের দিনেই এ দাবির পক্ষে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদে নেমেছেন। তাদের বক্তব্য, দেশের প্রায় সাড়ে তিন লাখ শূন্যপদ থাকায় জনগণ সঠিক সেবা পাচ্ছে না। জনবলের ঘাটতির কারণে প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে সমস্যায় পড়ছে, যা দেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করছে।
অতীতে বিসিএসের আগের ফলাফলের আগে পদসংখ্যা বাড়ানো হতো, কিন্তু এবার সব প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও পদ বৃদ্ধি কার্যকর হচ্ছে না, যা আন্দোলনকারীদের অসন্তোষের কারণ।
সরকারি দপ্তরে জনবলের সংকট দুর করতে না পারলে সাধারণ মানুষের সেবায় বিঘ্ন আসবে এবং সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে—এই উদ্বেগ নিয়েই কর্মসূচি চলছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি কর্মসংস্থানে বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। প্রায় তিন লাখের বেশি শূন্যপদ থাকায় সরকারি দপ্তরগুলো প্রয়োজনীয় কর্মী পাচ্ছে না। এর ফলে জনসাধারণের সেবা ব্যাহত হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের সক্ষমতাও সীমিত হচ্ছে।
এসব সংকটের মধ্যে ৪৪তম বিসিএসের ফল প্রকাশের দিনেই পদসংখ্যা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে বিসিএস পরীক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুরে তারা রমনা পার্ক থেকে যমুনা নদীর তীর পর্যন্ত পদযাত্রা করার চেষ্টা করেন। এই পদযাত্রা সরকারকে তাদের দাবির গুরুত্ব জানানোর একটি শান্তিপূর্ণ প্রয়াস ছিল।
কিন্তু পুলিশের বাধায় কর্মসূচিটি থেমে যায়। রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হচ্ছে এবং এতে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে পারে। তাই তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে।
অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, তাদের দীর্ঘদিনের দাবি শুনতে সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। পদসংখ্যা বৃদ্ধি না হলে দেশের প্রশাসন কার্যক্রম বন্ধের মুখে পড়বে এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন প্রভাবিত হবে।
বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, “আমরা দেশের উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করতে চাই। কিন্তু পর্যাপ্ত পদ না পেলে সরকারি কাজ আগাতে পারে না। এজন্য পদসংখ্যা বৃদ্ধি অপরিহার্য।”
সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে জনবল নিয়োগের অভাবে দীর্ঘ সময় ধরে কাজের চাপ বাড়ছে, ফলে জনগণের সেবা প্রক্রিয়া ধীরগতি হচ্ছে। পাশাপাশি নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের সক্ষমতাও কমে যাচ্ছে।
বিসিএস পরীক্ষার্থীদের এই আন্দোলন সরকারের প্রতি একটি স্পষ্ট সংকেত যে জনবল সংকট মোকাবেলায় পদ বৃদ্ধি বাধ্যতামূলক। তবে পুলিশের দৃষ্টিকোণ থেকে এই ধরনের বিক্ষোভ সাময়িক আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার কারণ হতে পারে, যা তারা ঠেকাতে বাধ্য।
অবস্থা যে তাত্ক্ষণিক পরিবর্তন হবে তা বলা কঠিন। কিন্তু ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষার্থীদের দাবি এবং আন্দোলন সরকারের সামনে এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। পদসংখ্যা বৃদ্ধি না হলে সেবা প্রক্রিয়া ও প্রশাসনিক কাজের গতি নষ্ট হতে পারে।
সরকারি পক্ষ থেকে যদি কার্যকর সমাধান না আসে, তবে আন্দোলন আরও শক্তিশালী হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। সাধারণ জনগণও চাইছে সরকারি কাজ সুষ্ঠুভাবে ও দ্রুত হয়। তাই দ্রুত পদসংখ্যা বৃদ্ধি এবং কর্মী নিয়োগের দাবি অবহেলা করা উচিত নয়।
এখন দেখার বিষয়, সরকারের কী পদক্ষেপ নেয় এবং কত দ্রুত এই সংকট মেটানো সম্ভব হয়।