বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সর্বোচ্চ পদ থেকে অপসারিত হওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের দারস্থ হয়েছেন সদ্য পদচ্যুত সভাপতি এবং জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ।
রোববার, ১ জুন হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করে তিনি এই অপসারণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন। একই সঙ্গে বিসিবির নতুন সভাপতি হিসেবে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নিয়োগকেও প্রশ্নবিদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করে তার বৈধতা নিয়েও আইনি আপত্তি তোলেন ফারুক।
আইনি লড়াইয়ের সূচনা
ফারুক আহমেদের পক্ষে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল। গণমাধ্যমকে তিনি রিট দায়েরের তথ্য নিশ্চিত করে জানান, “রিটের শুনানি সোমবার অনুষ্ঠিত হতে পারে।” তবে রিটের কনটেন্ট বা বিস্তারিত বিষয়ে মন্তব্য করতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
এই রিট আবেদন শুধু ফারুকের অপসারণ নয়, বরং বিসিবির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়েও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে — প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও ক্রীড়া ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহিতার বিষয়টি আবার সামনে চলে এসেছে।
দলীয় সিদ্ধান্ত না ব্যক্তিগত চাপ?
ফারুক আহমেদ দাবি করেছেন, তাকে বিসিবির সভাপতি পদ থেকে সরানোর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বা লিখিত কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। গত ২৯ মে (বৃহস্পতিবার) বিকেলে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তাকে নিজের বাসভবনে ডেকে সিদ্ধান্ত জানান যে, তিনি আর সভাপতি হিসেবে বহাল থাকছেন না।
ফারুকের অভিযোগ, তাকে কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই অপসারণ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের পিছনে রাজনৈতিক প্রভাব কিংবা অভ্যন্তরীণ বোর্ড রাজনীতি কাজ করেছে কিনা, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে জোরালো সন্দেহ।
রাতারাতি সিদ্ধান্ত, গভীর রাতে অপসারণ
বৃহস্পতিবার রাতেই বিসিবির অভ্যন্তরে নাটকীয়ভাবে পাল্টে যায় চিত্র। বিপিএল সংক্রান্ত সত্যানুসন্ধান কমিটির একটি প্রতিবেদন ও পরিচালনা বোর্ডের নয়জনের মধ্যে আটজনের অনাস্থা বিবেচনায় নিয়ে, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (NSC) গভীর রাতে ফারুকের মনোনয়ন বাতিল করে দেয়।
এই গোপন ও দ্রুত পদক্ষেপ বিসিবির অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে। বিশেষ করে, বিসিবির মতো সংবেদনশীল একটি ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানে এমন ‘রাতের আঁধারে’ সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি দেশবাসীর নজর কাড়ে।
নতুন সভাপতি হিসেবে বুলবুলের আগমন
ফারুককে সরিয়ে দেওয়ার পরদিন, ৩১ মে শুক্রবার বিকেলে বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে নতুন সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে পরিচিত এই সাবেক অধিনায়ক বিসিবির ১৭তম সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন।
তবে তার নিয়োগ প্রসঙ্গে ফারুকের রিটে প্রশ্ন তোলা হয়েছে — এই প্রক্রিয়াটি কতটা স্বচ্ছ, আইনানুগ ও পূর্বঘোষিত ছিল, সেটি আদালতের রুলে স্পষ্ট হবে।
বিসিবির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং রাজনৈতিক প্রভাব
ক্রিকেট বোর্ডের এই অভ্যন্তরীণ রদবদল শুধু একটি ব্যক্তির অপসারণে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি বোর্ডের দীর্ঘদিনের নীতি নির্ধারণী দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং ও প্রভাবশালীদের আধিপত্যের প্রতিচ্ছবি বলে মনে করছেন ক্রীড়া বিশ্লেষকরা।
ফারুক আহমেদের অপসারণের নেপথ্যে রাজনৈতিক চাপ, বোর্ডের ভেতরকার স্বার্থ সংঘাত এবং বিগত মাসগুলোতে বোর্ড পরিচালনায় অনিয়মের অভিযোগকে কেন্দ্র করেই এই সংকটের জন্ম হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আসছে আইনি লড়াইয়ের ঝড়?
ফারুক আহমেদের রিট যদি হাইকোর্টে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়, তাহলে বিসিবির নেতৃত্ব নিয়ে চলমান এই বিতর্ক আরও বিস্তৃত আকার ধারণ করতে পারে। একই সঙ্গে এনএসসি’র ক্ষমতার সীমা ও বিসিবির প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন নিয়েও উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের অভ্যন্তরীণ প্রশাসন নিয়ে যে প্রশ্ন এতদিন চুপচাপ ঘুরে বেড়াচ্ছিল, সেটি এবার আইনি চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেল। ফারুকের রিট যদি আদালতে গৃহীত হয়, তাহলে বিসিবির নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা, নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন আলোচনার দরজা খুলে যেতে পারে।