close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

বিশ্ববাজারে ডলারের দাম কমেছে, সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ও ট্রাম্পের হুমকিতে বিশ্ববাজারে ডলার দরপতনের শিকার। ইউরো-পাউন্ডের বিপরীতে ডলার দর নেমেছে বহু বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে।..

বিশ্বজুড়ে মুদ্রাবাজারে এক চমকপ্রদ পরিবর্তন ঘটেছে। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির প্রেক্ষাপট, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ট্রাম্পের কঠোর ভাষার কারণে মার্কিন ডলার এখন সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন মূল্যে পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতে ইউরো ও পাউন্ডসহ অন্যান্য বড় মুদ্রা ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, যা বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিবেশে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে।

বৃহস্পতিবার ইউরোর বিপরীতে ডলারের দাম একধাক্কায় নেমে গেছে। ২০২১ সালের অক্টোবরের পর প্রথমবারের মতো ইউরোর মান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.১৬৮৭ ডলার, যা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আরও বেড়ে ১.১৯০৯ পর্যন্ত উঠতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। এদিকে ব্রিটিশ পাউন্ডের দামও বেড়েছে ০.২ শতাংশ, দাঁড়িয়েছে ১.৩৬৯০ ডলার—যা ২০২২ সালের জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ।

সুইস ফ্রাঁর বিপরীতে ডলার আরও বড় ধাক্কা খেয়েছে। এক ফ্রাঁর বিপরীতে ডলার এখন মাত্র ০.৮৩৩, যা ২০১১ সালের পর সর্বনিম্ন। ইয়েনের বিপরীতেও একই চিত্র—ডলারের মান কমে দাঁড়িয়েছে ১৪৪.৮৯, কমেছে ০.২ শতাংশ। ডলার ইনডেক্স বা সূচকও ২০২২ সালের শুরুর পর সর্বনিম্ন ৯৭.৪৯১-এ নেমে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা নিয়েও বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমান ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে সরিয়ে নতুন কাউকে বসাতে চান। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এই ঘোষণাও আসতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন সম্ভাবনা বাজারে এক ধরনের ভয় তৈরি করেছে। ইনটাচ ক্যাপিটাল মার্কেটসের কিয়ারান উইলিয়ামস বলেন, “ফেড চেয়ারম্যান পরিবর্তনের গুঞ্জন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত মনে হলে ফেডের স্বাধীনতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।”

পাওয়েলকে নিয়ে ট্রাম্পের আক্রমণ এখন সরাসরি। বুধবার তিনি তাকে ‘ভয়ংকর’ বলে অভিহিত করেন এবং অভিযোগ তোলেন যে, পাওয়েল সুদের হার যথাযথভাবে কমাচ্ছেন না। একই সময়ে সিনেটের সামনে পাওয়েল ট্রাম্পের শুল্কনীতিকে মূল্যস্ফীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন।

বাজারে গুঞ্জন—আগামী জুলাই মাসের ফেড বৈঠকে সুদের হার কমানো হতে পারে। এক সপ্তাহ আগেও যেখানে এ সম্ভাবনা ছিল ১২ শতাংশ, তা এখন ২৫ শতাংশে পৌঁছেছে। বাজার এখন মনে করছে, বছরের শেষ নাগাদ সুদের হার প্রায় ৬৪ ভিত্তি পয়েন্ট কমতে পারে—যা মাত্র এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৬ পয়েন্ট।

এদিকে ২ এপ্রিল ঘোষিত ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কনীতি আগামী ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত রয়েছে। অর্থাৎ সময় ঘনিয়ে আসছে, আর এই সময়ের মধ্যে অন্যান্য দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে আসতে হবে। নাহলে ফের নতুন শুল্কের মুখোমুখি হতে হবে বিশ্ববাণিজ্যকে।

জেপি মরগান জানিয়েছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র বেশি হারে শুল্ক আরোপ করে, তাহলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে এবং মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, মন্দার আশঙ্কা এখন ৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্লেষকদের ভাষ্য, এত দিন যুক্তরাষ্ট্র তুলনামূলকভাবে যে অর্থনৈতিক সুবিধা ভোগ করছিল, সেটির অবসান ঘটছে। আর সেই কারণেই ডলার তার ঐতিহাসিক শক্তি হারাতে বসেছে। বিনিয়োগকারীরা এখন ডলারকে আর আগের মতো নিরাপদ মুদ্রা হিসেবে দেখছেন না। এই অনাস্থাই ডলারকে আরও চাপে ফেলছে।

এই প্রেক্ষাপটে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে। ইউরোপের নেতারা প্রতিরক্ষা ও অবকাঠামো খাতে একসাথে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অর্থনীতিবিদদের মতে, এতে ইউরোপের অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল এবং প্রবৃদ্ধিশীল হতে পারে। ফলে বিনিয়োগকারীরা ইউরোকে ডলারের বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করেছেন।

ডলারের এই পতন কেবল মার্কিন অর্থনীতির সমস্যা নয়, বরং একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পালাবদলের ইঙ্গিত দিচ্ছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, শুল্কনীতি ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে ডলার এখন আর ‘নির্ভরযোগ্য আশ্রয়’ নয়। বিনিয়োগকারীরা এখন নতুন বিকল্প খুঁজছেন, এবং ইউরো-পাউন্ড সেই শূন্যতা পূরণ করতে প্রস্তুত।

No comments found