ইরানের অনন্য ভূরাজনৈতিক অবস্থান
বিশ্ব মানচিত্রে ইরান এমন একটি জায়গায় অবস্থান করছে যা এশিয়া, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংযোগস্থল হিসেবে কাজ করে। দেশটি তুরস্ক, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ গুরুত্বপূর্ণ দেশের প্রতিবেশী। তেল ও গ্যাস রিজার্ভের দিক থেকে ইরান বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ, যা তাকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কেন্দ্রে নিয়ে আসে।
ইরান শুধু প্রাকৃতিক সম্পদে নয়, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রভাবেও শক্তিশালী। শিয়া মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত ইরান দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। ফলে বিশ্ব শক্তিগুলো ইরানকে পাশ কাটিয়ে চলতে পারে না।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার চ্যালেঞ্জ ও ইরানের কৌশল
২০১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘ম্যাক্সিমাম প্রেসার’ নীতির আওতায় ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এতে ইরানের তেল রপ্তানি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়, যা দেশটির অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
তবে ইরান বিকল্প পথ বের করার চেষ্টা করেছে। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে অর্থনৈতিক চুক্তি সম্পাদন করেছে। চীন ইতোমধ্যে ইরানের তেল ও গ্যাস আমদানির অন্যতম প্রধান দেশ হয়ে উঠেছে। রাশিয়াও ইরানের সঙ্গে অবকাঠামো ও প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা বাড়িয়েছে।
ইরানকে পাশ কাটিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্ভব?
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানকে উপেক্ষা করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কঠিন হবে। সম্প্রতি পাকিস্তান ও রাশিয়া নতুন রেলপথ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, যা ইরানের ভেতর দিয়ে যাবে। এ রেলপথ মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার সংযোগ বৃদ্ধি করবে।
এ ছাড়া ইরান মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তায়ও বড় ভূমিকা পালন করছে। ইয়েমেন, সিরিয়া, ইরাক ও লেবাননের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইরান সরাসরি জড়িত। সৌদি আরব ও ইসরায়েলের সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ইরান তার সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে, যা তাকে আরও অপ্রতিরোধ্য করে তুলছে।
ভবিষ্যতে ইরান: কী অপেক্ষা করছে?
বিশ্ব রাজনীতিতে ইরানের ভূমিকা ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে। দেশটি একদিকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার চাপে রয়েছে, অন্যদিকে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান তার ভূরাজনৈতিক কৌশল অব্যাহত রাখলে ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব ও ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব এতটাই বেশি যে, তাকে উপেক্ষা করা প্রায় অসম্ভব।



















