close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

বিশ্ব ইজতেমায় বিভাজন: কীভাবে রাজনীতির ছায়া পড়ল অরাজনৈতিক তাবলিগে?

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সংঘর্ষে প্রাণহানি, দুই গ্রুপের আলাদা আয়োজন, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা—বাংলাদেশের তাবলিগ জামাত কি ক্রমেই রাজনীতির মঞ্চে পরিণত হচ্ছে? বাংলাদেশের টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত বিশ
সংঘর্ষে প্রাণহানি, দুই গ্রুপের আলাদা আয়োজন, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা—বাংলাদেশের তাবলিগ জামাত কি ক্রমেই রাজনীতির মঞ্চে পরিণত হচ্ছে? বাংলাদেশের টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমা এতদিন একটি নির্দিষ্ট ধারার ধর্মীয় সমাবেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই ইজতেমাকে কেন্দ্র করে তীব্র মতবিরোধ, প্রাণহানি, এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ বিষয়টিকে নতুন মোড় দিয়েছে। সংঘর্ষ ও প্রাণহানি: ইজতেমা মাঠে নজিরবিহীন রক্তপাত গত ১৮ ডিসেম্বর টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপ—মাওলানা জুবায়ের অনুসারী ও মাওলানা সাদ কান্দালভির অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চারজনের প্রাণহানি ঘটেছে, যা বিশ্ব ইজতেমার ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা। সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তি চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার মারা যান। ফলে এই সহিংসতা আরও গভীর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে—তাবলিগের মতো একটি অরাজনৈতিক সংগঠনে কীভাবে এমন সহিংসতা প্রবেশ করল? কোন পক্ষ কবে ইজতেমার আয়োজন করছে? প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবারও ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে: ✔ জুবায়েরপন্থিদের প্রথম পর্ব: শুরু ২ ফেব্রুয়ারি, আখেরি মোনাজাত ২ ফেব্রুয়ারি। ✔ জুবায়েরপন্থিদের দ্বিতীয় পর্ব: ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি। ✔ সাদপন্থিদের ইজতেমা: ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি। ✔ ইজতেমা মাঠের নিয়ন্ত্রণ: ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রশাসনের হাতে চলে যাবে। কেন এবং কীভাবে এই বিভক্তি? তাবলীগ জামাতের মূল কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদ বর্তমানে কার্যত জুবায়েরপন্থিদের নিয়ন্ত্রণে। তারা দাবি করেছে, সাদ কান্দালভির অনুসারীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত। সাদপন্থিদের অন্যতম নেতা সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম এই বিভেদ ও সংঘর্ষের জন্য সরাসরি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন— "সমস্যার মূল কারণ হলো ধর্মভিত্তিক দলগুলো। তারা মাদ্রাসার ছাত্রদের এনে সংঘর্ষে জড়িয়েছে, যা পুরো বিষয়টিকে রাজনৈতিক রূপ দিয়েছে।" অন্যদিকে, জুবায়েরপন্থি নেতা মাহফুজ হান্নান এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, "তাবলীগ রাজনৈতিক রূপ নেয়নি। বরং সাদ কান্দালভির জন্যই সংকট তৈরি হয়েছে। এবার তাকে আর ইজতেমা আয়োজন করতে দেওয়া হবে না।" কীভাবে রাজনীতির রঙ লাগল? বিশ্ব ইজতেমার ইতিহাস কয়েক দশক ধরে চলে আসছে, কিন্তু ২০১৭ সালে মোহাম্মদ সাদ কান্দালভির একটি বক্তব্যের পর থেকেই বিভেদ শুরু হয়। এরপর থেকে তাবলীগ জামাতের ভেতরে দু'টি গ্রুপ তৈরি হয়—একটি সাদ কান্দালভিকে অনুসরণ করে, অন্যটি তাকে প্রত্যাখ্যান করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও এই বিভক্তি ছড়িয়ে পড়লেও বাংলাদেশেই প্রথমবারের মতো ইজতেমা আলাদাভাবে আয়োজন করা হচ্ছে। সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের ভাষ্যমতে, "গত ৭০ বছর ধরে দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের নির্দেশনায় তাবলীগ চলে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশে কিছু অংশ আলাদা হয়ে গেছে এবং মূলত নিয়ন্ত্রণ ও রাজনৈতিক স্বার্থের কারণেই বিভেদ তৈরি হয়েছে।" বিশ্ব ইজতেমার ভবিষ্যৎ কী? বর্তমান পরিস্থিতি বলছে, তাবলীগ জামাতের এই বিভক্তি সহজে মিটবে না। বরং ভবিষ্যতে সংঘাত আরও বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত হয়, তাহলে তাবলীগের নিরপেক্ষ অবস্থান হুমকির মুখে পড়বে এবং এর ঐতিহ্যগত ধর্মীয় চরিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো— ➡ তাবলীগ কি ধর্মীয় আদর্শে ফিরতে পারবে, নাকি এটি রাজনৈতিক প্রভাবের শিকার হয়ে যাবে? ➡ বিশ্ব ইজতেমার ঐক্য কি আর ফিরে আসবে?
Geen reacties gevonden


News Card Generator