ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিনের শত্রুতা এবার রূপ নিল সরাসরি সামরিক সংঘাতে। সোমবার রাতভর ইরানের দিক থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় চালানো হয় ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। তেল আবিব, হাইফা ও আশপাশের অঞ্চলগুলোতে পরপর বিস্ফোরণ ঘটলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
ইরানি গণমাধ্যমগুলোর দাবি, দেশটির সাইবার যোদ্ধারা ইসরায়েলের 'আয়রন ডোম' প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হ্যাক করতে সক্ষম হয়েছে, যার ফলে বহু ক্ষেপণাস্ত্র নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। সবচেয়ে বড় ধ্বংসযজ্ঞ দেখা গেছে হাইফার তেল শোধনাগারে, যা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
একই সময়ে ইসরায়েলও বসে থাকেনি। পাল্টা হামলায় লক্ষ্য করা হয় ইরানের রাজধানী তেহরানকে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। সরাসরি সম্প্রচারে থাকা উপস্থাপক ও স্টাফদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে চরম আতঙ্ক। শহরের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে পড়ে বিদ্যুৎব্যবস্থা ও মোবাইল টাওয়ার।
ইরান সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত পাল্টা বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়—এই হামলা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের চরম লঙ্ঘন এবং এর উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।
বিষয়টি আন্তর্জাতিক রাজনীতির নতুন উত্তেজনার জন্ম দেয়, যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরাসরি ইঙ্গিত দেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘Truth Social’-এ পোস্ট দিয়ে ইসরায়েলকে সতর্ক করেন।
তিনি বলেন, “খামেনিকে হত্যার মতো সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই। তবে ইরান যদি পারমাণবিক চুক্তিতে না আসে, তাহলে তেহরানের বাসিন্দাদের শহর ছাড়ার সময় এসেছে।
ইরানি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, হামলার সময় তাবরিজ এলাকায় ইসরায়েলের একটি অত্যাধুনিক F-35 যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে। যদিও এই দাবির পক্ষে কোনো স্বাধীন সূত্র থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবে বিষয়টি আরও জটিল করে তুলেছে।
ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসেন। তিনি বলেন,
আমরা যুদ্ধ চাই না। কিন্তু আমাদের জনগণের ওপর কোনো হামলা হলে তাৎক্ষণিক ও উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীও একে "কূটনীতির প্রতি সরাসরি হামলা" হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
বিশ্বের নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এই সম্ভাব্য পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং রাশিয়াও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে, এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বিমান চলাচলে জারি হয়েছে সতর্কতা।
তেল আবিবে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং তেহরানে বিস্ফোরণ যুদ্ধ পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। নেতানিয়াহুর হুমকি এবং ট্রাম্পের সাফ বার্তা—এই সংঘাত আর শুধু সীমান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। এখন প্রশ্ন একটাই: এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি কি পরিণত হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে?