বিরোধীদের ‘সন্ত্রাসবাদী প্রোপাগান্ডার অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্টে বাংলাদেশ সরকারের কঠোর সমালোচনা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি প্রকাশিত বার্ষিক সন্ত্রাস বিষয়ক রিপোর্টে বাংলাদেশ সরকার এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কঠো
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি প্রকাশিত বার্ষিক সন্ত্রাস বিষয়ক রিপোর্টে বাংলাদেশ সরকার এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করেছে। ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেরোরিজম ২০২৩’ শীর্ষক ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিরোধী রাজনীতিকে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলার প্রবণতা দেখা গেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্য বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জঙ্গি তৎপরতা ও সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বহুজাতিক সন্ত্রাসী সহিংসতার কোনো রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। তবে উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রমে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। বিশেষভাবে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এবং আইএসআইএস সংশ্লিষ্ট জামাআতুল মুহাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ পুলিশের প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ ইউনিটগুলো কয়েক ডজন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে এবং ইন্টারপোলের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করেছে। পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ জাতীয় পর্যায়ে সন্ত্রাসীদের একটি ওয়াচলিস্ট তৈরি করেছে। তবে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে যথাযথ কার্যকর সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা সংকট মে মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামে দুজন সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনার জন্য সরকার বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-কে দায়ী করে। একই বছর মার্চ মাসে আরেক সেনা সদস্য নিহত হন। রিপোর্টে বলা হয়, কেএনএফ আল-কায়েদার আদর্শে অনুপ্রাণিত জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়া (জেএএইচএস) গোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণের নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে। তবে সরকার জানায়, ২০২৩ সালের শুরুতেই জেএএইচএস-এর কর্মকাণ্ড ব্যাহত করা হয়েছে এবং তাদের কথিত আমিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই বছরে কোনো বড় হামলার খবর পাওয়া যায়নি। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিতর্কিত আইন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করলেও সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার ও আটক রাখার বিতর্কিত নীতি অব্যাহত রয়েছে। ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করে এর নাম সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ) রাখা হয়েছে। এই আইন পুলিশের ক্ষমতা বাড়ালেও সরকারবিরোধী মতপ্রকাশকারী নাগরিকদের গ্রেফতার ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। আন্তর্জাতিক সমালোচকদের মতে, সিএসএ এখনও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধতা তৈরি করছে। নাগরিক সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের টার্গেট করতে আইনটি ব্যবহৃত হচ্ছে। সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাংলাদেশ সরকার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিটিসি), এন্টি-টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) এবং র‍্যাব-কে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ১৬৩ সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে এবং ৫৫টি মামলা দায়ের করে। বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট দেশের বিভিন্ন শহরে বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। সীমান্ত নিরাপত্তা ও আধুনিকায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ স্থল ও সমুদ্রসীমা পাহারা দিতে সক্ষম। চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলোর নিরাপত্তায় উন্নতি করা হয়েছে। কার্গো এবং যাত্রীদের স্ক্রিনিং সুবিধা আধুনিকায়নে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক এই রিপোর্টে বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের প্রশংসা করা হলেও বিরোধী রাজনীতিকে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলার প্রবণতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষ করে বিতর্কিত আইন ও বিচার-বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
कोई टिप्पणी नहीं मिली