শরিফ ওসমান হাদির জানাজার জনস্রোত, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা এবং বাতাসে ভাসতে থাকা ‘বিপ্লবী সরকার’ গঠনের গুঞ্জন গত কয়েকদিনের এই ঘটনাপ্রবাহ কি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা, নাকি এর পেছনে রয়েছে গভীর কোনো রাজনৈতিক নকশা? জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদ কামাল তার সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে তুলে এনেছেন এমনই কিছু চাঞ্চল্যকর প্রশ্ন ও অসঙ্গতি।
সংসদ ভবনে প্রবেশের চেষ্টা: লক্ষ্য কি ‘বিপ্লবী সরকার’? শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় হাদির জানাজা শেষে এক অদ্ভুত দৃশ্যের অবতারণা হয়। জানাজা শেষ হতেই বিশাল এক জনস্রোত সংসদ ভবনের মূল ফটকের দিকে দৌড়াতে শুরু করে। মাসুদ কামাল প্রশ্ন তোলেন, ‘‘জানাজা শেষে মানুষ কেন সংসদ ভবনের শতাধিক সিঁড়ি ভেঙে উপরে ওঠার চেষ্টা করবে? তাদের মগজে কি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে সংসদ দখল করতে হবে?’’
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, একটি মহল ‘বিপ্লবী সরকার’ গঠনের ধারণা ছড়িয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। হয়তো তাদের বোঝানো হয়েছিল, সংসদ ভবন দখল করলেই সেই কথিত সরকার গঠন সম্ভব হবে।
গণমাধ্যমে হামলা: উস্কানিদাতা কারা? প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে মাসুদ কামাল ‘পরিকল্পিত’ বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, হামলার ঠিক আগেই রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের নেতারা প্রকাশ্য সমাবেশে এই দুই পত্রিকা বন্ধের হুমকি দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে তিনি বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদের অভিযোগের বরাত দিয়ে বলেন, ‘‘গোয়েন্দা তথ্য থাকা সত্ত্বেও সরকার কেন এই হামলা ঠেকাতে ব্যবস্থা নিল না?’’
মাসুদ কামাল এক বড়সড় অসঙ্গতির দিকে আঙুল তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘শেখ হাসিনা নিজে যে দুটি পত্রিকাকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করতেন এবং যাদের তার প্রেস কনফারেন্সে ঢুকতে দিতেন না, আজ তাদেরকেই ‘ভারতের দালাল’ বা ‘দিল্লির সেবাদাস’ বলে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে। এই ন্যারেটিভ কারা তৈরি করছে?’’
‘প্রথম আলো’র বদলে ‘আমার দেশ’ বিশ্লেষণে উঠে এসেছে আরেকটি রহস্যজনক তথ্য। যেদিন হামলার কারণে প্রথম আলো প্রকাশিত হয়নি, সেদিন অনেক পাঠকের হাতে হকাররা ‘আমার দেশ’ পত্রিকা তুলে দিয়েছিলেন। মাসুদ কামাল প্রশ্ন রাখেন, ‘‘এর নেপথ্যে কি কোনো বাণিজ্যিক বা রাজনৈতিক যোগসূত্র আছে?’’
সরকারের প্রতি কঠোর বার্তা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ‘নন-সিরিয়াস’ বা গুরুত্বহীন সরকার হিসেবে অভিহিত করে মাসুদ কামাল সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন। ধর্ম উপদেষ্টা হামলাকারীদের শনাক্তের কথা বললেও, মাসুদ কামালের মতে শুধু হামলাকারী নয়, যারা এই হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ বা প্ররোচনাদাতা, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘যদি এখনই শক্ত হাতে দমন করা না হয়, তবে আগামী দিনগুলো গত দেড় বছরের চেয়েও ভয়াবহ হবে।’’
শোককে শক্তিতে পরিণত করার বদলে, কেউ কেউ কি সেই শোককে পুঁজি করে দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে? ‘বিপ্লবী সরকার’র এই বেলুন কি তবে সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ? এই প্রশ্নগুলোই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সচেতন মহলে।



















