close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

বিনি সুতোর মালায় গাঁথা তাঁরা তিনজন, সেই ‘মালা’ ২২ জুন

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
একই দিনে শুরু, শেষ আর আবির্ভাব—২২ জুন তিন কিংবদন্তি বোলারকে গেঁথেছে এক সুতোয়। লর্ডসের মাঠে ইতিহাস হয়ে থাকা তিনটি টেস্ট গল্প জানলে আপনি শিহরিত না হয়ে পারবেন না!..

২২ জুন—ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় এই তারিখটি যেন এক রহস্যময় অলৌকিক সংযোগের দিন। বছর তিনেক, তিনজন কিংবদন্তি, আর একটি স্থান—লর্ডস। ক্রিকেট ইতিহাসের তিন বিখ্যাত নাম অ্যালেক বেডসার, ফ্রেড ট্রুম্যানবব ম্যাসি, যাঁদের টেস্ট জীবনের সূচনা কিংবা শেষ, তিনটি ঘটনাই ঘটেছে এই ২২ জুনেই।

তাঁরা কেউ জীবিত, কেউ প্রয়াত। তবুও কল্পনায় যেন আজও তাঁরা এক টেবিলে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। আড্ডার বিষয়? অবশ্যই—২২ জুন!

১৯৬৫ সালের ২২ জুন। ইংল্যান্ড বনাম নিউজিল্যান্ড টেস্ট ম্যাচ। ম্যাচে ব্যাটই করতে হয়নি তাঁকে। ৩০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়ে যাওয়া প্রথম ফাস্ট বোলার হিসেবে সেই দিনটি ট্রুম্যানের ক্যারিয়ারের সমাপ্তির দিন হলেও, মাঠে তিনি ছিলেন কেবল দর্শক। ব্যাট হাতে নামার সুযোগ হয়নি, বল হাতে তো নয়ই। আর এভাবেই তাঁর বর্ণাঢ্য টেস্ট অধ্যায়ের শেষ লিখে দিয়েছিল ২২ জুন।

তারপরও ট্রুম্যান ছিলেন গল্পের মানুষ। সরস কথাবার্তা, অজস্র কৌতুক আর রসবোধে পূর্ণ এক ব্যক্তি। ‘আফটার ডিনার স্পিকার’ হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তা যেমন ছিল, তেমনি BBC-এর টেস্ট ম্যাচ স্পেশাল-এ তাঁর ধারাভাষ্য এখনো কিংবদন্তির অংশ।

১৯৪৬ সালের ২২ জুন, লর্ডসে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকেই ৭ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট। পরের ম্যাচেও ১১ উইকেট। এমন সূচনায় বোঝাই যায়, এই দিনটি বেডসারের জন্য ছিল শুধুই রৌদ্রোজ্জ্বল সম্ভাবনার পূর্বাভাস।

সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ৫১ টেস্টে ২৩৬ উইকেটের মালিক হন তিনি। ক্যারিয়ারের শেষে বেডসারই ছিলেন টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক। পরবর্তীতে ছিলেন ইংল্যান্ডের জাতীয় নির্বাচক, এবং ৭টি অ্যাশেজ সিরিজের নেতৃত্ব দিয়েছেন নির্বাচক হিসেবে, যার মধ্যে ৫টিতেই জয়!

১৯৭২ সালের ২২ জুন, অস্ট্রেলিয়ান পেসার বব ম্যাসি লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকে খেলতে নামলেন। সেই ম্যাচেই প্রথম ইনিংসে ৮ উইকেট, দ্বিতীয় ইনিংসেও ৮ উইকেট—মোট ১৬ উইকেট! যেটি তখনকার অভিষেক ম্যাচে সেরা বোলিং পারফরম্যান্স ছিল।

কিন্তু ক্রিকেট বিধাতা যেন তাঁকে দিলেন ধূমকেতুর জীবন। ৬ টেস্টেই তাঁর ক্যারিয়ার থেমে গেল। মোট ৩১ উইকেট। সুইং করানোর সহজাত ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলেন একসময়। গুজব ওঠে তিনি বল সুইং করাতে ঠোঁটে ক্রিম ব্যবহার করতেন—যা বন্ধ করার নির্দেশ এসেছিল স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের কাছ থেকে। যদিও ব্র্যাডম্যান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।

একজনের অভিষেক, একজনের বিদায়, আরেকজনের ঝলমলে শুরু—তিনটি ঘটনাই লর্ডসে, তিনটি তারিখই ২২ জুন! এমন কাকতালীয়তা কল্পনাকেও হার মানায়। ক্রিকেট ইতিহাসে এমন নিখুঁত মিল সত্যিই বিরল।

কল্পনায় যদি অ্যালেক বেডসার ও ফ্রেড ট্রুম্যান এখনো স্বর্গে বসে আড্ডা দেন, তাহলে ম্যাসিকে নিয়ে তাঁদের আলোচনাও হয়তো চলছেই। কেউ হয়তো বলছেন, ম্যাসির শুরুটা তো ছিল আমাদের মতোই, শেষটা শুধু হল না!” অন্যজন হয়তো দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, “সম্ভাবনা থাকলেই সবসময় তার বাস্তবায়ন হয় না বন্ধু!

ক্রিকেট কেবল পরিসংখ্যানের খেলা নয়, এটি গল্পের, আবেগের, স্মৃতির এক বর্ণময় মহাকাব্য। ২২ জুন তারিখটি যেন সে কাব্যের এক ব্যতিক্রমী ছন্দ। যেখানে বেডসারের স্বপ্নের শুরু, ট্রুম্যানের পরিণতি আর ম্যাসির ধূমকেতুর মতো উত্থান ও পতন—সব মিলে গাঁথা এক বিনি সুতোয়।

এই তিন কিংবদন্তিকে নিয়ে এই তারিখ যেন ক্রিকেট ভক্তদের জন্য হয়ে উঠেছে এক চিরন্তন প্রতীক—একটি দিন, তিনটি গল্প, একটি ইতিহাস!

Hiçbir yorum bulunamadı