close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

বিল দিচ্ছেন নিয়মিত, বিনিময়ে পোকা-মেশানো পানি! রাজধানীতে ওয়াসার দূষিত পানিতে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
পানিতে পোকা! দুর্গন্ধ, ফেনা আর জীবন্ত জোঁকের মতো কীটসহ কল থেকে পানি আসছে রাজধানীর নানা এলাকায়। ওয়াসার দাবি: সব ঠিক আছে। বাসিন্দাদের প্রশ্ন: তবে এই যন্ত্রণার শেষ কোথায়? জেনে নিন ভয়াবহ বাস্তবতা ও কর্তৃপ..

নিয়মিত বিল পরিশোধ করেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা পাচ্ছেন এমন এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা, যা সত্যিই শিউরে ওঠার মতো। কল খুললেই হালকা হলুদ রঙের পানি, তীব্র দুর্গন্ধ, ফেনা আর তার সঙ্গে নতুন সংযোজন—জোঁকের মতো চিকন ও লম্বা জীবন্ত পোকা! এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়ে চরম ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন নগরবাসী।

মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা আনিছ হক জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে তাদের বাসার পানিতে জীবন্ত পোকা আসছে। এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার লালমাটিয়া জোন অফিসে পানি, ট্যাপ, ট্যাংক এবং মেইন সাপ্লাই লাইনের নমুনা জমা দিলেও কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, "আমরা তো নিয়মিত বিল দিই, তবুও কেন এমন পানি পান করব? এটা কি আমাদের প্রাপ্য? এই পানি খেয়ে আমাদের পরিবার এখন হাসপাতালে পেটের পীড়া আর চর্মরোগে ভুগছে—এর দায় কে নেবে?"

জোনায় জোনায় দূষণ—কোথাও তাজা পানি নেই!

মোহাম্মদপুর ছাড়াও কল্যাণপুর, তেজগাঁও, মালিবাগ, মগবাজার, মধুবাগ, বাসাবো, মানিকনগরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে একই ধরনের অভিযোগ আসছে। কোথাও এই সমস্যা চলছে মাসখানেক ধরে, কোথাও বা সপ্তাহখানেক। কেউ কেউ জানিয়েছেন, প্রায় তিন মাস আগে থেকে কখনো কখনো এই পোকাযুক্ত পানি দেখা গেলেও এপ্রিল থেকে তা রীতিমতো স্থায়ী আকার ধারণ করেছে।

মানিকনগরের কেয়া আক্তার ৬ এপ্রিল ‘মানিকনগর’ নামক ফেসবুক গ্রুপে লেখেন—
"পানির ভেতর কেঁচোর বাচ্চা! লাল, সুতার মতো লম্বা পোকা। কী ভয়ংকর অবস্থা। এর কোনো সমাধান নেই?"

এমন স্ট্যাটাস পোস্ট হওয়ার পর অসংখ্য মানুষ নিজেদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে থাকেন। খিলগাঁওয়ের তারাবাগ এলাকার বাসিন্দা সোহেলি বেগম বলেন, "বাড়িওয়ালা ট্যাংক পরিষ্কার করিয়েছেন। কিন্তু অবস্থার বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি।"

বিশেষজ্ঞরা বলছেন: স্বাস্থ্যঝুঁকি গুরুতর

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, পানিতে পোকা থাকার মানে হচ্ছে, কোথাও না কোথাও পাইপলাইনে ফাটল বা বড় ধরনের রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি রয়েছে। এমন পানি ত্বকে সংক্রমণ, চর্মরোগ এবং পেটের মারাত্মক অসুখের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এই পানি ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করছে।

এক বিশেষজ্ঞ বলেন, “এই পানি কোনোভাবেই ব্যবহারযোগ্য নয়। অবিলম্বে এর সমাধান না হলে রাজধানীতে বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সংকট দেখা দিতে পারে।”

কী বলছে ওয়াসা?

ঢাকা ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, "এ সময় নদীর পানিতে পোকা ও দুর্গন্ধ বেশি থাকে। ফলে ট্রিটমেন্টে অতিরিক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করতে হয়। কোথাও ট্রিটমেন্টে সমস্যা হলে সেই পানি সরাসরি লাইনে চলে যেতে পারে।"

তিনি আরও জানান, “ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার লাইনে লিকেজ আছে। সেই স্থান দিয়েও ময়লা পানি ও পোকা প্রবেশ করতে পারে। অনেক জায়গায় অবৈধ সংযোগও রয়েছে, যা সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।”

ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) এ কে এম শহীদ উদ্দিন বলেন,
"অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষণিক লোক পাঠিয়ে পরীক্ষা করি। এখন পর্যন্ত সরবরাহ লাইনের পানিতে কোনো সমস্যা পাইনি। আমাদের পরিশোধিত পানিতে ক্লোরিন থাকে, পোকা থাকলে তা মরে যাওয়ার কথা।"

তবে বাসিন্দারা বলছেন, এই উত্তর আর আশ্বাস তারা বহুবার শুনেছেন, কিন্তু বাস্তবের পানি আজও আগের মতোই নোংরা, দুর্গন্ধযুক্ত ও পোকায় ভর্তি

জনমনে প্রশ্ন: এই ভোগান্তির শেষ কোথায়?

সাধারণ মানুষ চায় সুপেয় পানি—তা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু সেই অধিকার যখন পোকামিশ্রিত দূষিত পানিতে রূপ নেয়, তখন প্রশ্ন জাগে—এই শহরের ভবিষ্যৎ কোথায়? কতদিন এমন ‘পরিশোধিত ভোগান্তি’ চলবে?

Aucun commentaire trouvé


News Card Generator