close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

বিয়ের তিন মাসেই মৃত্যুর অন্ধকারে প্রেমিক যুগল: ঘরে মিলল ঝুলন্ত মরদেহ..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রেমের পরিণতি হিসেবে বিয়ে করেছিলেন রাসেল ও জুঁই। সুখেই কেটেছিল মাত্র তিন মাস। হঠাৎই এক সকাল তাদের ঘর থেকে উদ্ধার হলো ঝুলন্ত মরদেহ। প্রেম, বিয়ে, আর মৃত্যুর এই রহস্যে হতবাক পুরো গ্রাম।..

বিয়ের তিন মাসেই প্রেমিক যুগলের রহস্যজনক মৃত্যু: ঘরে মিলল ঝুলন্ত দেহ

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের ডাকেরপাড়া গ্রামে ঘটেছে এক মর্মান্তিক ঘটনা। মঙ্গলবার (৪ জুন) সকাল ১০টার দিকে স্থানীয়রা দেখতে পান নবদম্পতি রাসেল মিয়া (১৮) এবং জুঁই খাতুন (১৫)-এর ঝুলন্ত মরদেহ নিজ ঘরেই অবস্থান করছে। এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে পুরো গ্রাম স্তব্ধ হয়ে যায়।

রাসেল ছিলেন ওই গ্রামের জাকিরুল ইসলামের ছেলে এবং একজন রাজমিস্ত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। অপরদিকে জুঁই খাতুন একই গ্রামেরই বাসিন্দা। মাত্র তিন মাস আগে, ভালোবাসার সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবারের সম্মতি নিয়ে তারা বিয়ে করেন। তাদের দাম্পত্য জীবন ছিল অনেকটা নিঃশব্দে সুখী – অন্তত বাইরের দৃষ্টিতে তেমনটাই মনে হয়েছিল।

 

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার দুপুরে এই নবদম্পতি পুকুরে একসঙ্গে গোসল করেন। পরে ঘরে ফিরে স্বাভাবিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করেন এবং রাতে ঘুমাতে যান। তাদের মধ্যে কোনো রকম ঝগড়া, মনোমালিন্য বা অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি।

কিন্তু পরদিন মঙ্গলবার ভোরে রাসেলের মা রাশিদা বেগম ছেলেকে ঘুম থেকে ডাকতে গিয়ে কোনো সাড়া না পেয়ে জানালার ফাঁক দিয়ে ঘরে উঁকি দেন। তখনই তার চোখে পড়ে নির্মম এক দৃশ্য—রাসেল গলায় গামছা এবং জুঁই ওড়না ব্যবহার করে ঘরের তীরের সঙ্গে ঝুলে আছে।

 

ঘটনার পরপরই পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুলফিকার আলী ভুট্টু সাংবাদিকদের জানান, “খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই এবং মরদেহ দুটি উদ্ধার করি। রাসেল গলায় গামছা ও জুঁই গলায় ওড়না দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, "আত্মহত্যার সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। পরিবার, প্রতিবেশী এবং নিকটজনদের সাথে কথা বলে সবদিক খতিয়ে দেখা হবে।

 

এ ঘটনার পর পুরো ডাকেরপাড়া গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না, এমন এক দম্পতি যারা সবসময় হাসিখুশি থাকতেন, তাদের জীবন এমন করুণ পরিণতির দিকে যাবে।

গ্রামের এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, “রাসেল ও জুঁইয়ের মধ্যে প্রেম ছিল। সবাই জানত। কিন্তু বিয়ের পর তাদের মধ্যে কোনো সমস্যা ছিল বলে কারও জানা নেই। এটা আত্মহত্যা না অন্য কিছু, বুঝে ওঠা যাচ্ছে না।”

 

এই মৃত্যু কি সত্যিই আত্মহত্যা, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে কোনো অজানা চাপ, পারিবারিক কলহ, সামাজিক নিপীড়ন বা অন্য কিছু? বিশেষজ্ঞদের মতে, কিশোর বয়সে বিয়ে করলে মানসিক চাপ বা দাম্পত্য বিষয়ে পরিপক্ক সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারণে অনেক সময় এমন ঘটনা ঘটে থাকে।

এমনকি সামাজিক বা পারিবারিক বাধা-উপাধির কথাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুজনের সম্পর্ক ও বিয়েতে কেউ কেউ প্রথমদিকে আপত্তি জানিয়েছিল, যদিও পরে বিষয়টি মেনে নেওয়া হয়।

 

রাসেল ও জুঁইয়ের অকাল মৃত্যু তাদের পরিবারের জন্য যেমন, তেমনি পুরো সমাজের জন্য একটি দুঃখজনক ট্র্যাজেডি। প্রেম, বিয়ে ও মৃত্যুর মধ্যে এত দ্রুত পরিণতি কল্পনাও করা কঠিন। পুলিশি তদন্ত হয়তো প্রকৃত সত্য উদঘাটন করবে, তবে এই মৃত্যু আমাদের মনে আরও একবার প্রশ্ন জাগায়—কিশোর প্রেম ও বিয়ের সামাজিক প্রস্তুতি কি আমরা যথাযথভাবে নিচ্ছি?

No comments found


News Card Generator