দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে নতুন গণআন্দোলনের বার্তা দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি। দলটি আয়োজিত এক গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে হাজির থাকছেন একে একে দলের শীর্ষ নেতারা। সবচেয়ে বড় চমক হলো, দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে কোনও রাজনৈতিক আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেল ৩টায় রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে এ সম্মেলন। অনুষ্ঠানের শিরোনাম—
"গণঅভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা"।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি যুক্তরাজ্য থেকে এই আয়োজনে সংযুক্ত হয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
অনুষ্ঠানে শুধু দলের শীর্ষ নেতৃত্বই নয়, আন্দোলনের শহীদ পরিবারের সদস্যরাও বক্তব্য রাখবেন। বিএনপি মনে করছে, যারা রাজনৈতিক আন্দোলনে প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাদের কণ্ঠে নতুন করে আন্দোলনের পটভূমি তৈরি হবে।
এই আয়োজনকে ঘিরে জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের এক মঞ্চে উপস্থিতি রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বার্তা দিতে পারে। বিএনপি আশা করছে, এই সম্মেলনের মাধ্যমে তারা জনসমর্থনের শক্ত ভিত আরও একবার সুদৃঢ় করতে পারবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সভাপতিত্ব করবেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিএনপি তাদের পরবর্তী রাজনৈতিক কর্মসূচির রূপরেখা ঘোষণা করতে পারে। বিশেষ করে জাতীয় সরকার গঠনের সম্ভাব্য রোডম্যাপ, সর্বদলীয় ঐক্য গঠনের চেষ্টা ও আগাম নির্বাচন ইস্যুতে নতুন বার্তা আসতে পারে।
বিএনপি নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এই আয়োজন একদিকে যেমন জাতীয় ঐক্যের বার্তা বহন করবে, অন্যদিকে গণঅভ্যুত্থানের প্রস্তুতির সূচনা হিসেবেও দেখছে তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খালেদা জিয়ার সরাসরি উপস্থিতি এবং তারেক রহমানের ভার্চুয়াল অংশগ্রহণ—দলের ভেতরে-বাইরে শক্তি জোগাবে।
দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে। এতে সারা দেশের নেতাকর্মীরা একযোগে যুক্ত হতে পারবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই আয়োজন বিএনপির চলমান আন্দোলনের একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। যেখানে শুধুমাত্র কথার ফুলঝুরি নয়, কৌশলগত বার্তা থাকবে। আর খালেদা জিয়ার উপস্থিতি এই সম্মেলনকে অন্য মাত্রা দিতে চলেছে।
তাদের মতে, জাতীয় ঐক্যের ডাক বাস্তবায়নে বিএনপি যদি আরও কিছু দলকে একসাথে আনতে পারে, তাহলে তা সরকারবিরোধী বৃহৎ জোটে রূপ নিতে পারে।
বিএনপির এই আয়োজন নিছক একটি সম্মেলন নয়, বরং একে "চূড়ান্ত রাজনৈতিক প্রস্তুতির সূচনা" হিসেবে বিবেচনা করছে সংশ্লিষ্ট মহল। আগামী দিনের রাজনীতির মোড় ঘোরাতে এই জাতীয় ঐক্য সম্মেলন কতটা সফল হয়, এখন সেটাই দেখার বিষয়।