বিদ্রোহী ও প্রেমিক একসঙ্গে দুই সত্তার কবি নজরুল
লিখেছেন: কবি ও কথা সাহিত্যিক দেলওয়ারা মিনা।
কাজী নজরুল ইসলাম—এই নাম শুধু একটি নাম নয়, এটি একটি চেতনার নাম। বিদ্রোহ আর প্রেম, সাম্য আর মানবতার এক অপার মিলনক্ষেত্র এই মানুষটির সাহিত্য। আমরা তাঁকে ‘বিদ্রোহী কবি’ বলেই চিনি, কিন্তু তাতে তাঁর কবি পরিচয়ের পূর্ণতা প্রকাশ পায় না। তিনি ছিলেন বিদ্রোহের মতোই প্রেমেরও এক অবিস্মরণীয় কণ্ঠস্বর।
তাঁর কবিতা শুধু তীব্র প্রতিবাদের ঢাকের আওয়াজে থেমে থাকেনি, বরং সেখানে বাজে প্রেমের মৃদু বাঁশিও—যা অনেক সময় আরও গভীর, আরও মানবিক। তাঁর জীবন ছিল আগুনে ঝাঁপ দেওয়া এক অবিচল পথচলা, আর তাঁর কলমে সেই আগুনই রূপ নিয়েছে কখনো বজ্রঘন কাব্যে, কখনো শ্রাবণের মেঘভেজা প্রেমগাঁথায়।
তিনি লিখেছেন:
“আমি সেই দিন হব শান্ত
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবেনা...”
এই কবিতায় যেমন বিদ্রোহের প্রতিধ্বনি আছে, তেমনি আছে মানুষের মুক্তির প্রতি এক অন্তরঙ্গ আকুলতা। নজরুলকে বোঝার জন্য তাঁর ‘বিদ্রোহী’ চেহারার বাইরেও দেখতে হয়, সেখানে দেখা যায় এক ভালোবাসায় পূর্ণ মানুষ, যিনি প্রেমের পক্ষে, নারীর পক্ষে, নিপীড়িতের পক্ষে।
নজরুলের প্রেম অন্ধ আবেগ নয়, তা ছিল জীবনের প্রতি, সৃষ্টির প্রতি, মানুষের প্রতি এক সর্বব্যাপ্ত ভালোবাসা। অনেকেই মনে করেন, যোদ্ধা কণ্ঠে প্রেম বেমানান। নজরুল তা ভুল প্রমাণ করেছেন—তিনি ছিলেন এমন এক কবি, যিনি প্রেমকে পরম সাহসে উচ্চারণ করতে জানতেন। ভালোবাসা, তাঁর কবিতায়, ছিল বিপ্লবেরই আরেক রূপ।
বাংলা সাহিত্যে নজরুলের আবির্ভাব যেন এক ধূমকেতুর বিস্ফোরণ। প্রচলিত ধারার বিপরীতে, সাহিত্যে তাঁর আগমন ছিল ঝড়ের মতো, যে ঝড় ভাঙে, গড়ে, আবার পথে রেখে যায় নতুন সম্ভাবনার রেখাচিত্র।
রিভিউ:
কবিতার শরীরে আগুন, হৃদয়ে জল—এই তো নজরুল
আমরা অনেক কবিতা পড়ি। কিছু ভালো লাগে, কিছু নয়। কিন্তু কিছু কবিতা থাকে, যেগুলো আর পাঠ নয়, যেন এক ধরণের অভিজ্ঞতা। এই লেখাটি সেইরকম—এটি কেবল একটি লেখা নয়, এটি একটি চেতনার দোলা, একটি অন্তরঙ্গ আত্মপরিচয়ের পুনরাবিষ্কার।
আমরা অভ্যস্ত হয়েছি ‘বিদ্রোহী’ তকমায় নজরুলকে দেখে। কিন্তু এই লেখায় তাঁর প্রেমিক রূপের যে উন্মোচন ঘটেছে, তা পাঠকের ভেতরে প্রশ্ন তো তোলে, আবার দেয় নতুন চোখেও দেখার সাহস। বিদ্রোহ আর প্রেম—এই দুই বিপরীত সত্তা যে একই হৃদয়ে বাস করতে পারে, সেটা এত সূক্ষ্মভাবে, এত মানবিক আবেগে লেখা—যেটা সাধারণ রিভিউ দিয়ে ধরা যায় না।
এই লেখাটি যেন নজরুলেরই এক চিত্রপট, যেখানে ভাষা কেবল বাহন নয়, অনুভূতির শরীর। লেখকের শব্দচয়ন, প্রবাহ, এবং বিষয়ের গভীরতায় যেন পাঠকের হৃদয় নড়ে ওঠে। রিভিউ যদি হয় শুধু বিশ্লেষণ নয়, একটি প্রতিক্রিয়া—তাহলে এই রিভিউ দাঁড়ায় এক ধরনের অভিজ্ঞান হিসেবে: হ্যাঁ, আমরা নজরুলকে নতুন করে অনুভব করলাম।
এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রয়াস, যেখানে নজরুলকে শুধু পড়া হয়নি, তাঁকে ছুঁয়ে দেখা গেছে।