ঢাকা, এপ্রিল ২০২৫
বিদ্যুৎখাত নিয়ে সরকারের বহুল প্রশংসিত উন্নয়নের পেছনে ছিল কি কৃত্রিম দুর্ভোগ তৈরি করে ‘নিজেদের লোকদের’ লাভবান করার গোপন ষড়যন্ত্র? আওয়ামী লীগের এক প্রবীণ নেতার ফেসবুক পোস্ট ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সিদ্দিকী নাজমুল নামের এই নেতা এক দীর্ঘ পোস্টে সরাসরি অভিযোগ করেছেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী বিপু এবং তার ঘনিষ্ঠ আমলাদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল একটি শক্তিশালী বিদ্যুৎ সিন্ডিকেট, যারা কৃত্রিম লোডশেডিং তৈরি করে কমিশনভিত্তিক ব্যবসা চালিয়েছেন।
নাজমুল লিখেছেন, “অনেকদিন চুপ ছিলাম, কিন্তু আর পারলাম না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, তখন তারই সরকারে থাকা কিছু বিদ্যুৎ চোর প্রধানমন্ত্রীর চোখে ধুলো দিয়ে নিজেরা লাভবান হয়েছেন।”
তিনি বলেন, এবারের রমজানে তুলনামূলকভাবে লোডশেডিং কম হয়েছে, যার মানে হলো—পূর্বে বিদ্যুৎ সংকটের বড় একটি অংশই ছিল কৃত্রিম। বিদ্যুৎ ব্যবসার নামে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজেদের পছন্দের পাওয়ার প্লান্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা কমিশন আদায় করেছেন বলে দাবি তার।
নাজমুল পোস্টে বিস্ফোরক মন্তব্য করে বলেন, “বিপু হচ্ছে সর্বকালের সেরা বিদ্যুৎ চোর। ওর স্ত্রী, ভাই, এমনকি সন্তানরাও এই চুরির সঙ্গে জড়িত। গত ১০ বছরে ওদের জীবনযাপন দেখে মনে হয় যেন আমরা প্রজা আর ও রাজা।”
তিনি অভিযোগ করেন, সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর ব্যবসার পেছনে বিএনপি-জামাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভূমিকা রয়েছে এবং তারা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এই চেইন অপারেট করছে।
রাজনৈতিক অপব্যবহার ও পরিবারকেন্দ্রিক দম্ভ
সিদ্দিকী নাজমুল তার পোস্টে আরও দাবি করেন, বিপুর পরিবার চরিত্রহীন এবং তারা রাজনীতিকে রাজপথ থেকে সরিয়ে বিলাসবহুল রুমে স্থানান্তর করেছেন। তিনি বলেন, “রাজনীতি এখন আর ত্যাগের জায়গা নেই, কর্পোরেটের জায়গায় রূপান্তরিত হয়েছে। বিপুর মতো ব্যক্তিরা ছাত্র, যুবক ও শ্রমিকদের রাজনীতি ধ্বংস করে শুধু আরামদায়ক রাজনীতি করে।”
তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা ধ্বংস হয়ে গেছি, ঠিক যেমন মুসলমানরা আজ ফিলিস্তিনিদের জন্য আবাবিল পাখির অপেক্ষায় আছে। আওয়ামী লীগের কর্মীরা এখন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে থাকে, যেন তারা এসে আমাদের উদ্ধার করে।”
এলাকার রাজনীতিতেও দুর্বলতা
পোস্টে উল্লেখ আছে, বিপু তার এলাকার রাজনীতিতেও কার্যত অদৃশ্য। বাস্তবিক নেতৃত্ব দিচ্ছেন শাহীন চেয়ারম্যান, যিনি কর্মীবান্ধব ও জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত। অথচ, বিপুর প্রভাবে তার একজন ব্যক্তিগত সহকারীকে উপজেলা পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে।
নাজমুল বলেন, “শাহীন চেয়ারম্যানের মতো অভিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে ইয়ো ইয়ো টাইপের ছেলেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যেটা রাজনীতিকে এক ধরনের অপমান।”
ব্যক্তিগত জীবনের বিলাসিতা বনাম সাধারণ মানুষের দুঃখ
নাজমুল আক্ষেপ করে বলেন, “বিপু তার ছেলেমেয়েদের বিলাসবহুল জীবন দিচ্ছেন, অথচ আমরা সাধারণ দলীয় কর্মীরা আমাদের সন্তানদের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “আমি সরকারে থেকেও কখনো অন্যায় মেনে নেইনি। নিজের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লড়েছি, অথচ বিপুরা রক্ষা পায় সিন্ডিকেটের আশ্রয়ে।”
রাজনীতির ভবিষ্যৎ ও বিশ্বাসের সংকট
লেখার শেষে সিদ্দিকী নাজমুল সরাসরি মন্তব্য করেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই সংসদে বলেছেন—এই আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা ছাড়া সবাইকে কেনা যায়। আমি এই কথা শতভাগ বিশ্বাস করি।”
তিনি বলেন, “নেত্রী যতদিন থাকবেন, আমি রাজনীতি করব। কিন্তু যেদিন নেত্রী থাকবেন না, সেদিন আমার রাজনীতিরও শেষ।”
এই পোস্টের মাধ্যমে একটি বড় প্রশ্ন সামনে এসেছে—বিদ্যুৎখাতে আদৌ কি উন্নয়ন হয়েছে, না কি কৃত্রিম সংকটের আড়ালে হয়েছে একচেটিয়া লুটপাট? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দলের অভ্যন্তরে এমন সাহসী ও স্পষ্টবাদী কণ্ঠ রাজনীতির জন্য যেমন আশার আলো, তেমনি ক্ষমতাসীনদের জন্য সতর্ক সংকেত।



















