২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা গোপন তথ্য নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি প্রবাসী সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট ড. কনক সারওয়ার ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা একটি পুরনো ভিডিওতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সরাসরি দাবি করেছেন, এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের সব কিছুই জানতেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভিডিওতে খালেদা জিয়া প্রশ্ন তুলেছেন, ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার এক মাসের মধ্যে এমন একটি বড় ঘটনা কেন ঘটল?’ তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা সেদিন সেনানিবাসে ডিনারে যাননি, যেটা তার আগেরবার গিয়েছিলেন। আর পরের দিনই এ হত্যাকাণ্ড ঘটে যায়। এটা কি কোনো দুর্ঘটনা?
খালেদা জিয়া স্পষ্টভাবে অভিযোগ করেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে হাসিনা এবং তৎকালীন সেনাপ্রধান মইনুদ্দিন সব জানতেন। তারা এর জন্য দায়ী। তাদেরকে একদিন অবশ্যই জবাব দিতে হবে।
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘৫৭ জন ভালো অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে, তাদের পরিবারের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা হৃদয়বিদারক। কেউকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে, কাউকে গার্বেজে ফেলা হয়েছে।’
তৎকালীন কর্নেল গুলজার উদ্দিন আহমেদ ছিলেন একজন সুপরিচিত ও ভালো অফিসার, যিনি জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমানকে গ্রেফতার করেছিলেন। হত্যাকাণ্ডের দিন গুলজার সন্ধ্যা পর্যন্ত র্যাব ও সেনাপ্রধানের কাছে বারবার সাহায্যের আবেদন করেন, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি।
খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, ‘আর্মি বসে ছিল কিন্তু পারমিশন পাচ্ছিল না। র্যাব পিলখানায় ঢুকতে পারেনি। যদি ঢুকতে পারত, হয়তো অনেক অফিসার বাঁচানো যেত।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সম্পদকে ধ্বংস করা হয়েছে। আর্মি শেষ করা হয়েছে। এর জন্য দায়ী শেখ হাসিনা।’ তদন্ত কমিটির কাজকেও তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেন, বলছেন, ‘দলীয় লোক দিয়ে শুধুমাত্র ছবি দেখানোর জন্য একটি তদন্ত চালানো হয়েছে। প্রকৃত তদন্ত হয়নি।’
খালেদা জিয়ার বক্তব্য, ‘শেখ হাসিনা এবং মইনুদ্দিন সরাসরি এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। তারা একসঙ্গে শেরাটন হোটেল থেকে খাবার এনেছিলেন এবং ওইসব ঘটনায় হাসিনার ডিএডি তৌহিদও জড়িত ছিলেন।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘শেখ হাসিনা মিথ্যা কথা বলছেন, জনগণের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছেন এবং দেশের নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলছেন। আল্লাহ অবশ্যই বিচার করবেন।’
এই আলোচনায় দেশের সামরিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের গভীর সংকট ও নানাবিধ প্রশ্ন তুলে ধরা হয়েছে, যা এখনও দেশের জনমনে বড় ধরনের আলোচনার বিষয়। বিডিআর হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের সামরিক ইতিহাসের কালো অধ্যায় হিসেবে থেকে গেছে এবং আজও এর সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের খুঁজে বের করার দাবি জোরালো হচ্ছে।



















