ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী জনপদ যেন রবিবার বিকেলে রূপ নিল প্রতিবাদের মঞ্চে। জেলার স্বাস্থ্যসেবা ও উচ্চশিক্ষা অবকাঠামোর দীর্ঘদিনের অবহেলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন জেলার সচেতন শিক্ষার্থীরা। সরকারি মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন তারা।
বিকাল ৪টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সামনে শুরু হয় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি। এতে সভাপতিত্ব করেন সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ফাহিম মুনতাসির এবং সঞ্চালনা করেন ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিকের শিক্ষার্থী সানিউর রহমান।
বক্তব্য রাখেন জেলা গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের আহ্বায়ক আব্দুন নুর, খেলাঘর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহ-সভাপতি বিশ্বজিৎ পাল, সাংবাদিক শাহাদাৎ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সাবের হোসেন, জেলা ছাত্রদলের কর্মী মোকাররম হোসেন, ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিকের শিক্ষার্থী মোজ্জামেল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর কলেজের সাইফুল ইসলাম এবং অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুস্তফা জাফরি।
বক্তারা বলেন, “ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাংলাদেশের প্রাচীন জনপথগুলোর একটি। এখানকার ভূমি যেমন উর্বর, তেমনি মানুষের অবদানও দেশের উন্নয়নে অনস্বীকার্য।” বক্তারা জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে আধুনিক বাংলাদেশের প্রতিটি পদক্ষেপে এই জেলার রয়েছে দৃশ্যমান অংশগ্রহণ। অথচ অবহেলার শিকার হয়ে দীর্ঘ ৫০ বছরেও এখানে স্থাপন করা হয়নি একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ বা কোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রতিদিন প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের চিকিৎসার ভরসা মাত্র একটি জেলা হাসপাতাল ও কয়েকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম, নেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নেই পর্যাপ্ত শয্যাসংখ্যাও। ফলে জটিল রোগীদের সেবা নিতে পাড়ি দিতে হয় ঢাকা বা চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে। এতে সময়, অর্থ এবং জীবন—সবকিছু নিয়েই বাড়ছে ঝুঁকি।
বক্তারা আরও বলেন, “সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নেই বলে মেধাবীরা জেলা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল নন, তাদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন থেকে যেতে হয় অনেক দূরে।” ফলে মেধা অপচয় হচ্ছে, কমছে শিক্ষার গুণগত মান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া গ্যাসক্ষেত্র, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, সারকারখানা, নদীবন্দর ও স্থলবন্দর, চাল উৎপাদনের দিক থেকে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এখানকার প্রবাসীদের পাঠানো অর্থও জাতীয় রিজার্ভে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। অথচ এত গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে সরকারি বিনিয়োগ অত্যন্ত সীমিত।
বক্তাদের দাবি
➤ দ্রুত সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন
➤ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন
➤ স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো উন্নয়ন
➤ উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতকরণ
মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন, যা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলজুড়ে ছিল স্লোগান—
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বঞ্চিত কেন?”, মেডিকেল চাই, বিশ্ববিদ্যালয় চাই”, “শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মৌলিক অধিকার!
বিক্ষোভের পর স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদেরও চাপে পড়তে হয়েছে বলে জানাচ্ছেন অংশগ্রহণকারীরা। আন্দোলনকারীরা হুঁশিয়ার করে বলেন, এই দাবিগুলো পূরণ না হলে আরও বড় আন্দোলনে যাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছাত্রসমাজ।
শুধু একটি মেডিকেল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিই নয়, এটি এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষের আত্মমর্যাদার লড়াই। একটি সম্ভাবনাময় জেলা কেন পিছিয়ে থাকবে—এই প্রশ্নে আজ গর্জে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন যদি এবারও ঘুমিয়ে থাকে, তাহলে আগামীর আন্দোলন আরও দুর্দম হবে—এই হুঁশিয়ারি স্পষ্ট করে দিয়ে গেল এই প্রতিবাদ।
 'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  
  
 
		 
				 
			



















 
					     
			 
						 
			 
			 
			 
			 
			 
			