ভোলায় একের পর এক গ্রাম পানির নিচে, উপকূলে দেখা দিয়েছে তীব্র আতঙ্ক
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি এখন সুস্পষ্ট নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে। এর প্রভাবে ভোলার উপকূলীয় অঞ্চলজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ পরিস্থিতি। মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে জোয়ারের পানি বিপৎসীমার অনেক ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চলসহ বহু গ্রাম এখন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। স্থানীয়দের ভাষায়, এটি শুধুমাত্র বন্যা নয়—এ যেনো প্রকৃতির এক অঘোষিত হুমকি।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভোলায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া দপ্তর, যার ফলে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই টানা ভারী বৃষ্টি আর তীব্র জোয়ারের পানিতে ভোলার সদর উপজেলার রাজাপুর, পশ্চিম ইলিশা, পূর্ব ইলিশা এবং কাঁচিয়া ইউনিয়নের একাধিক গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে। এছাড়া দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ও চরপাতা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাইরের বিশাল অংশে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে।
মনপুরা উপজেলার চরকুকরি-মুকরি, ঢালচর ও চরপাতিলা, তজুমুদ্দিন উপজেলার চর জহিরউদ্দিন—এইসব এলাকাগুলোর অবস্থাও ভয়াবহ। উত্তাল মেঘনার ঢেউয়ের তোড়ে হুমকির মুখে পড়েছে জেলার একাধিক শহররক্ষা বাঁধ। স্থানীয়রা জানান, বাঁধের দুর্বল অংশগুলো ইতিমধ্যে পানির চাপে ফেটে যেতে শুরু করেছে, ফলে তারা পরিবার-পরিজন, গবাদি পশু নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর দিকে।
ভোলা জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো দিনভর কাজ করে যাচ্ছে উপদ্রুত এলাকাগুলো থেকে মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য। কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবক দলগুলো বিভিন্ন দুর্গম এলাকা থেকে মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে দিচ্ছে।
এদিকে সকাল থেকেই জেলার পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ নৌ-রুটে লঞ্চ চলাচল এবং দুটি রুটে ফেরি সার্ভিস সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে জেলেরা তাদের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলেছেন।
ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান জানান, “ঘূর্ণিঝড় ও নিম্নচাপকে কেন্দ্র করে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। জেলায় পর্যাপ্তসংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। খাদ্যসামগ্রী, ওষুধ, মেডিকেল টিম এবং স্বেচ্ছাসেবক দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যেন কোনো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।”
পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক না কেন, প্রশাসন ও স্থানীয়দের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভোলা এক বিপর্যয়ের মুখ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে চায়। তবে, প্রকৃতির রুদ্ররূপে আপাতত উপকূলবাসীর দুশ্চিন্তার কোনো অবসান নেই।



















