ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি জিম্মিদের মধ্যে অন্যতম এলকানা বোহবোটের একটি নতুন ভিডিও প্রকাশ করেছে হামাস। এটি বোহবোটের তৃতীয় ভিডিও, যেখানে তাকে স্পষ্টভাবে নিজের পরিবারের উদ্দেশ্যে আকুতি জানাতে শোনা গেছে। ভিডিওটি রোববার (২০ এপ্রিল) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা প্রকাশ করে টাইমস অব ইসরাইলের বরাতে।
ভিডিওতে বোহবোট একটি অভিনয়ধর্মী (মক) টেলিফোন কলে আবেগঘনভাবে বলেন, "আমার জন্য সবকিছু করো!" একই সঙ্গে তাকে সরকারের কাছে এবং রাষ্ট্রের কাছে আবেদন করতে দেখা গেছে, যেন তারা তাকে মুক্ত করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।
তিনি আরও বলেন, "আমার স্বাস্থ্য ভালো নেই। আমি ভয় পাচ্ছি যে হয়তো মারা যাবো।" তার কণ্ঠে আতঙ্ক আর অসহায়ত্ব স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
হামাস এমন এক সময়ে এই ভিডিওটি প্রকাশ করলো, যখন তারা সাম্প্রতিক একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তার বাহিনীকে গাজায় হামাসের ওপর চাপ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
হামাস জানিয়েছে, যদি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হয়, তাহলে তারা অবশিষ্ট সকল বন্দিকে একসঙ্গে মুক্তি দিতে প্রস্তুত। তবে বর্তমানে গাজায় আনুমানিক ৫৯ জন ইসরাইলি জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৪ জনের জীবিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস দক্ষিণ ইসরাইলে আক্রমণ চালায়। এতে প্রায় ১২০০ ইসরাইলি নাগরিক নিহত হন এবং আরও ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর থেকেই ইসরাইল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে, যা এখন পর্যন্ত চলমান।
এই অভিযানে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় গাজায় প্রাণ হারিয়েছে ৫১ হাজারেরও বেশি মানুষ। ধ্বংস হয়ে গেছে হাসপাতাল, স্কুল, বাসস্থান এবং নাগরিক অবকাঠামো।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার দীর্ঘ ১৫ মাস পর, গত ১৯ জানুয়ারি কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিশরের মধ্যস্থতায় একটি তিন ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়। প্রথম ধাপে যুদ্ধ বিরতি এবং জিম্মি-বন্দি বিনিময়, দ্বিতীয় ধাপে বন্দি বিনিময় সম্পন্ন করে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার এবং তৃতীয় ধাপে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা পুনর্গঠনের কথা ছিল।
কিন্তু ইসরাইল যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশ না করেই ১৮ মার্চ থেকে নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু করে। এই অভিযানে গাজায় আরও দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বলে জানায় উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে খাদ্য, ওষুধসহ জরুরি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে হামাসের ভিডিওটি কেবল মানবিক সংকটের ভয়াবহ চিত্রই নয়, বরং যুদ্ধবিরতি ও বন্দি মুক্তির প্রশ্নে কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনার কেন্দ্রে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে। এলকানা বোহবোটের আকুতি, তার পরিবার ও ইসরাইলি সমাজের কাছে এক তীব্র মানবিক আবেদন হয়ে উঠেছে—যেখানে প্রশ্ন শুধু একজন বন্দির নয়, বরং একটি সমগ্র অঞ্চলের শান্তির পথ রচনার।