ভাইরাল ‘নারী পাইলট আটক’ ছবির পেছনে যেটা সত্য: পুরোটাই গুজব!
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক ঘিরে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় তোলে। ছবির ক্যাপশনে দাবি করা হয়—“পাকিস্তান ভারতের আরও একটি রাফাল যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে এবং ওই বিমানের নারী পাইলটকে বন্দি করেছে।” বিষয়টি যতটা নাটকীয়, বাস্তবতা তার সম্পূর্ণ বিপরীত।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভাইরাল হওয়া ছবিটি বর্তমান কোনো সামরিক সংঘর্ষের নয়, বরং ২০২৩ সালের একটি দুর্ঘটনার। এটি ভারতের ‘কিরণ’ নামক একটি প্রশিক্ষণ বিমানের দুর্ঘটনায় আহত এক নারী পাইলটের ছবি, যিনি ভারতীয় বিমান বাহিনীতে শিক্ষানবিশ ছিলেন। অর্থাৎ, পুরো ঘটনাটি ভুয়া দাবি ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সাজানো।
আসল ঘটনার পেছনের দিনলিপি
রিউমর স্ক্যানার টিমের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ১ জুন ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের চামরাজনগরের উপকণ্ঠে ভোগপুরা নামক এলাকায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর (আইএএফ) একটি প্রশিক্ষণ বিমান ‘কিরণ’ বিধ্বস্ত হয়। তবে ভাগ্যক্রমে বিমানটি ধ্বংস হওয়ার আগেই দুই পাইলট নিরাপদে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন।
এ ঘটনায় আহত হন দুইজন—তেজপাল এবং ভূমিকা নামের দুই প্রশিক্ষণরত পাইলট। তাঁদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য বিমানযোগে বেঙ্গালুরুতে পাঠানো হয়।
এই ঘটনার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় দক্ষিণ ভারতের একটি জনপ্রিয় গণমাধ্যম ‘The News Minute’-এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিওতে। ভিডিওটির শিরোনাম ছিল—“IAF’s trainer aircraft crashes in Chamarajanagar” যা ২০২৩ সালের ১ জুলাই প্রকাশ করা হয়। ভাইরাল হওয়া ছবিটির সঙ্গে ওই ভিডিওর দৃশ্যের সরাসরি মিল রয়েছে।
মিথ্যা প্রচারণার বিপজ্জনক রূপ
Star of Mysore নামক একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকেও ওই একই ছবি ও তথ্য ২০২৩ সালের ১ জুন পোস্ট করা হয়েছিল। ফলে এটি নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয় যে, সাম্প্রতিক ভাইরাল হওয়া ছবিটির সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে চলমান কোনো সামরিক সংঘাত বা রাফাল ধ্বংসের কোনো সম্পর্কই নেই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার ফলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও আন্তঃদেশীয় সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য এমন মিথ্যা প্রচারণা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
বিভ্রান্তি নয়, সত্য জানুন
সুতরাং, ভাইরাল হওয়া “নারী পাইলট বন্দি” ছবিটি আদৌ কোনো সাম্প্রতিক যুদ্ধ বা পাকিস্তান-ভারত সংঘর্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এটি ২০২৩ সালের একটি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার সময় তোলা ছবি, যা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে।
বর্তমানের ডিজিটাল যুগে তথ্য যাচাই না করে বিশ্বাস করা বিপজ্জনক। গুজব থেকে সতর্ক থাকা, যাচাই-বাছাই করে তথ্য গ্রহণ করা—এটাই সময়ের দাবি।