ভারতীয় নাগরিককে 'জুলাই যোদ্ধা' বানিয়ে অপপ্রচার: ভুয়া ভিডিও ভাইরাল করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা!
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে হুইলচেয়ারে বসা এক ব্যক্তিকে আহত ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। দেশের অনলাইনে ভিডিওটি ভাইরাল হতেই শুরু হয় বিতর্ক। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুরো ঘটনাটিই ভুয়া এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এই ভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) অধীনস্থ ফ্যাক্ট চেক এবং মিডিয়া গবেষণা ইউনিট ‘বাংলা ফ্যাক্ট’। বাংলা ফ্যাক্ট-এর অনুসন্ধান বলছে, ভিডিওতে যাকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ বলা হচ্ছে, তিনি আদতে কোনো যোদ্ধা নন—তিনি ভারতীয় নাগরিক নজরুল হক।
নজরুল হক নামের এই ব্যক্তি চলতি বছরের ১৭ মার্চ ভারতের কলকাতা থেকে রোগীর ছদ্মবেশে হুইলচেয়ারে বসে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশ করেন। সেখানে কাস্টমস কর্মকর্তারা তল্লাশি চালিয়ে তার কাছ থেকে মদ ও কসমেটিকস পণ্য উদ্ধার করেন। এমন স্পষ্ট ঘটনাকে আড়াল করে তাকে একটি ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে ‘আহত মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করার পেছনে কারা জড়িত, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের অপপ্রচার সামাজিক বিভ্রান্তি ছড়ানোর একটি কৌশল। একজন বিদেশিকে মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙিয়ে 'জুলাই যোদ্ধা' হিসেবে পরিচিত করিয়ে দিলে জনসাধারণের আবেগের উপর চাপ পড়ে, এবং মূলত প্রকৃত ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়। এটি একদিকে যেমন জাতির অনুভূতির সঙ্গে প্রতারণা, অন্যদিকে এটি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নকেও সামনে আনে।
ভিডিওটি মূলত ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দাবি করা হয়, “একজন আহত জুলাই যোদ্ধাকে বিমানবন্দরে অপমান করে তার কাছ থেকে মদ উদ্ধার করা হয়েছে।” কিন্তু মূল ভিডিওটি যাচাই করে দেখা গেছে, সেই ‘আহত যোদ্ধা’ আসলে একজন চোরাচালানকারী, যিনি হুইলচেয়ারের ছদ্মবেশ নিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন।
ফ্যাক্টচেকিং বিশ্লেষকদের মতে, ভিডিওটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সম্পাদনা করা হয় যাতে বিভ্রান্তি ছড়ানো যায়।
বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, এবং যোদ্ধাদের সম্মান নিয়ে কেউ যেন কোনোভাবে খেলা না করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে সমাজের প্রতিটি স্তরকে। শুধু প্রশাসন নয়, সাধারণ জনগণকেও হতে হবে সচেতন।
'বাংলা ফ্যাক্ট'-এর অনুসন্ধান আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, ভুয়া তথ্য কীভাবে জাতির ইতিহাসকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করে।
এছাড়া বিষয়টি তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সচেতন মহল।
এই ঘটনাটি প্রমাণ করে, ডিজিটাল যুগে ভুয়া তথ্য একটি বড় হুমকি। একজন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশের 'জুলাই যোদ্ধা' বানিয়ে ভাইরাল করা শুধু হাস্যকর নয়, এটি জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।