তারা সংবাদপাঠের পোশাক পরে, হাতে মাইক ধরে—কিন্তু তাদের কথায় নেই কোনো সত্য, নেই কোনো দায়িত্ব। আছে শুধু বিষ, বিদ্বেষ আর বিকৃত উৎসাহ। আমি আজ লিখছি সেইসব তথাকথিত ‘সংবাদমাধ্যম’কে ঘিরে, যারা সাংবাদিকতার পবিত্র মঞ্চে দাঁড়িয়ে ঢালাও মিথ্যা ছড়িয়ে, বাংলাদেশ নামক একটি গর্বিত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চালিয়ে যাচ্ছে এক ধরনের চোরাগোপ্তা মিডিয়া-যুদ্ধ।
এই কলামের কেন্দ্রবিন্দু: News18 Bangla — ভারতের ২৪ ঘণ্টার একটি তথাকথিত বাংলা সংবাদ চ্যানেল, যা সাংবাদিকতার নামে আজ রাষ্ট্রীয় উগ্রতা, রাজনৈতিক উস্কানি এবং একঘেয়ে ঘৃণার হকারে পরিণত হয়েছে।
“Pakistan র পথেই হাঁটছে Yunus, এবার টার্গেট বাংলাদেশ ?”—এই ভিডিও রিপোর্টে যা বলা হয়েছে, তা যদি সাংবাদিকতা হয়, তাহলে জেলখানার কয়েদিদের প্রলাপও সাহিত্য। তারা বেমালুম ভুল তথ্য দিয়ে বলছে, বাংলাদেশ নাকি ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, মোহাম্মদ ইউনূস নাকি সেভেন সিস্টার দখলের পরিকল্পনায় আছে, বাংলাদেশ নাকি যুদ্ধ করতে যাচ্ছে! আহা, এত বড় সাহস! এমন কল্পনার বেহায়া খেলা কেবল একজন উগ্র জাতীয়তাবাদী কাঠপুতলিই খেলতে পারে।
News18 Bangla-এর রিপোর্টিং নয়, বরং তামাশা। তারা একদিকে মোহাম্মদ ইউনূসকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করছে, আবার অন্যদিকে বাংলাদেশের জাতিগত অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই ধরনের মনগড়া, শত্রুভাবাপন্ন বক্তব্য একেবারে ক্ষমার অযোগ্য।
বাংলাদেশ কখনো যুদ্ধ চায়নি, কখনো কারও বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করেনি। কিন্তু ভারতের কিছু ‘মিডিয়া গুন্ডা’ বারবার একথা বলার চেষ্টা করে, যেন বাংলাদেশ একটা বিপজ্জনক রাষ্ট্র, যেন বাংলাদেশ আজ চীনের এজেন্ট, পাকিস্তানের হাতের পুতুল! এবং এটা বলে তারা শুধু বাংলাদেশকে অপমান করে না—তারা তাদের নিজেদের বুদ্ধিকে পাঁঠার বুদ্ধিতে নামিয়ে আনে।
News18 Bangla যেভাবে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা খেলছে, তা শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়—বরং তা সরাসরি রাষ্ট্রীয় স্তরের উস্কানি। “অপারেশন ইঁদুর”, “আমরা বাংলাদেশকে ১০০ বছর পিছিয়ে দেব”, “কলকাতা দখল করবে বাংলাদেশ” — এসব অশ্লীল মিথ্যাচার প্রচার করে তারা কি ভাবছে? বাংলাদেশীরা গুহায় বাস করে?
না প্রিয় ভারতীয় মিডিয়াকর্মীরা, আমরা ১৯৭১ দেখেছি, আমরা জানি কিভাবে রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করতে হয়। আমরা কারও খোটা খেয়ে রাষ্ট্র গড়িনি, আমরা কারও দয়া করে টিকে নেই।
সত্যি বলতে কি, News18 Bangla-এর মত চ্যানেলগুলো আজ ‘সংবাদ’ নয়, বরং কুকথার প্ল্যাটফর্ম। ট্রল পেজ যেভাবে ব্যঙ্গ করে, তার চেয়েও নিচু মানসিকতায় এরা একেকটা অনুষ্ঠান বানায়। এরা সাংবাদিক না—এরা চ্যানেল-সন্ত্রাসী।
যেসব সাংবাদিক নিজেদের জাতীয়তাবাদ প্রমাণ করতে গিয়ে প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দেয়, তাদের নাম ইতিহাসে লেখা থাকবে 'হেইট ক্যাম্পেইনের বুদ্ধিহীন পুরোহিত' হিসেবে।
News18 Bangla চায় বাংলাদেশ ভীত হোক। ওরা চায় মোহাম্মদ ইউনূসকে টেনে নামিয়ে নিজেদের দেউলিয়া রাষ্ট্রনীতিকে আড়াল করুক। কিন্তু তারা ভুলে গেছে—বাংলাদেশ হলো সেই দেশ, যে দেশ শেখে আত্মমর্যাদায় দাঁড়াতে। আমাদের সম্মানকে কেউ চাইলেই পদদলিত করতে পারে না।
আমার স্পষ্ট দাবি—এই ধরনের সংবাদ যারা ছড়ায়, তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেওয়া হোক। ইউটিউব, ফেসবুকসহ সব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এইসব চ্যানেলের সত্যতা যাচাই করা হোক। এবং যদি প্রমাণিত হয় তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুজব ছড়াচ্ছে, তাহলে তাদের স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হোক।
বাংলাদেশ সরকার ও সাংবাদিক সংগঠনের প্রতি অনুরোধ—আপনারা এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। আমরা প্রতিবেশী বন্ধুত্ব চাই, কিন্তু গায়ে হাত দিলে জবাব দিতেও জানি।
এই দেশের প্রতিটি ইঞ্চি মাটি, প্রতিটি বুকভরা শ্বাস—গর্বের। একে যারা ছোট করে দেখে, তাদের মানসিকতা সংকুচিত। যারা মিথ্যা বলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ায়, তাদের ভয় পাওয়া নয়, তাদের নগ্নভাবে উন্মোচন করা আমাদের দায়িত্ব।
তোমাদের চ্যানেলে বাংলাদেশের নাম নিয়ে আগুন লাগানোর চেষ্টা করো না। কারণ আমরা আগুনে পুড়ে এসেছি—এখন শিখেছি আগুন নিভিয়ে, আলো জ্বালাতে।
লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন



















