close
কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!
প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা না বলার জন্য বিরোধীরা তাঁকে তিরস্কার করত। কেউ তাঁকে ডাকত ‘মৌনমোহন’ বলে। নীতিগত দৃঢ়তার অভাবের অভিযোগও তোলা হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁকে ঘিরে দুর্নীতির নানা অভিযোগও উঠেছিল। কিন্তু এই সমস্ত অপবাদ ও বিতর্কের মাঝেও ভারতের অর্থনীতির ইতিহাসে তাঁর অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি ভারতের অর্থনীতিকে খাদের কিনারা থেকে তুলে এনেছিলেন এবং প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এক নতুন যুগের।
সমালোচনার মুখোমুখি হলেও শান্ত মনমোহন
সমালোচকদের উদ্দেশে মনমোহন সিং একবার বলেছিলেন, ‘আশা করি ইতিহাস আমাকে অন্যভাবে মনে রাখবে। আমার প্রতি সদয় হবে।’ আজ তাঁর প্রয়াণের পর সেই সমালোচকরাও স্বীকার করছেন যে, আধুনিক ভারতের অর্থনৈতিক উদারীকরণের জনক মনমোহন সিং।
১৯৯১ সালে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময় ভারত এক গভীর অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত ছিল। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় শূন্য। এমন অবস্থায় তাঁর নেতৃত্বে শুরু হয় অর্থনৈতিক সংস্কারের যাত্রা। কর্পোরেট কর কমানো, বাজারকে উন্মুক্ত করা, বৈদেশিক বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়া – এই পদক্ষেপগুলোই ভারতকে বিশ্ব অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসে। তাঁর সেই পদক্ষেপের সুফল আজকের ভারতও উপভোগ করছে।
দুর্নীতির অভিযোগ এবং বাস্তবতা
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় দফায় কয়েকটি বড় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কয়লাখনি বণ্টন কেলেঙ্কারি, টু জি স্পেকট্রাম বা কমনওয়েলথ গেমস কেলেঙ্কারি – এই সবকিছুই ছিল আলোচনার শীর্ষে। কিন্তু কোনো তদন্তেই মনমোহন সিংকে ব্যক্তিগতভাবে দোষী প্রমাণ করা যায়নি। জনগণও তাঁকে একজন সৎ ও নির্ভরযোগ্য নেতা হিসেবেই মনে রেখেছে।
অর্থনৈতিক সংস্কারে পথপ্রদর্শক
মনমোহন সিং শুধু একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন অর্থনীতিবিদ এবং দেশপ্রেমিক। ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি তাঁর হাত ধরেই তৈরি হয়েছিল। আজকের ভারতের যে অর্থনৈতিক অবস্থান, তা সম্ভব হয়েছে তাঁর নেতৃত্ব ও দূরদৃষ্টির কারণে।
ইতিহাসের রায়ে মনমোহন
মনমোহন সিংয়ের মতো একজন ব্যক্তিত্ব রাজনীতির কাদা ছোড়াছুড়ি পছন্দ করতেন না। তাই অপবাদের জবাব দেওয়ার চেয়ে তিনি তাঁর কাজেই মন দিয়েছিলেন। ইতিহাস আজ তাঁর সেই কথার প্রতি সুবিচার করছে। ভারতের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি দেওয়া মানুষটি আজ ভারতের জনগণের হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
Inga kommentarer hittades