close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

ভারতের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়ংকর তথ্য দিল জাতিসংঘ Copied from: https://rtvonline.com/..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
জাতিসংঘের প্রতিবেদন জানাল ভারতের ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য। নয়াদিল্লি থেকে আটক ৪০ রোহিঙ্গাকে চোখ বেঁধে সাগরে ফেলে দেয় ভারতীয় নৌবাহিনী! এমন অমানবিক ঘটনার বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে উঠছে নিন্দার ঝড়।..

ভারতের বিরুদ্ধে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ, সাগরে ফেলে দেওয়া হয় রোহিঙ্গাদের

ঢাকা, ১৬ মে:
ভারত সরকারের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে জাতিসংঘ। সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস জানিয়েছে, ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে আটক ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে চোখ বেঁধে নিয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরের পাশে আন্দামান সাগরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এপি'র এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে চরম উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, ভারত জোরপূর্বক রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও জোরদার করেছে। এরই অংশ হিসেবে এমন অমানবিক কাজ সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জাতিগোষ্ঠীর একটি হলো রোহিঙ্গারা। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনযজ্ঞ থেকে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ভারতেও পালিয়ে গিয়েছিল প্রায় ২২ হাজার রোহিঙ্গা, যাদের জাতিসংঘ শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও ভারত সরকার কখনো তা মানেনি।

ভারতের দৃষ্টিতে রোহিঙ্গারা নিরাপত্তার হুমকি। সরকারিভাবে দেশটি দাবি করে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তাই তাদের ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে বিবেচনা করে ফেরত পাঠানোর কার্যক্রম চালাচ্ছে ভারত। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এই প্রক্রিয়ায় মানবতাবিরোধী আচরণ করছে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী।

৬ মে’র রাতের অমানবিকতা

গত ৬ মে নয়াদিল্লি থেকে ভারতীয় পুলিশ ৪০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে। পরে চোখ বেঁধে তাদের প্রায় ১৫০০ মাইল দূরের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে পাঠানো হয়। স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বরাতে জানা যায়, সেখান থেকে ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি জাহাজে করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় আন্দামান সাগরে। এরপর মিয়ানমারের তানিনথারি অঞ্চলের কাছাকাছি পৌঁছে প্রত্যেককে একটি করে লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে বাধ্য করা হয়।

রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, নৌবাহিনীর সদস্যরা তাদের মারধর করেছে এবং প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। অনেকেই তীরে পৌঁছাতে গিয়ে প্রাণ হারানোর আশঙ্কায় ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিল কিশোর, বৃদ্ধ এবং এমনকি ক্যানসার রোগীও। তবে ভাগ্যক্রমে সবাই কোনোমতে সাঁতরে তীরে পৌঁছায়।

জাতিসংঘের তীব্র নিন্দা ও তদন্ত দাবি

জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক মানবাধিকার দূত টম অ্যান্ড্রুজ বলেন, "নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাগরে ফেলে দেওয়া একটি ভয়ংকর মানবাধিকার লঙ্ঘন। আমি এ বিষয়ে আরও তথ্য ও সাক্ষ্য সংগ্রহ করছি এবং ভারত সরকারকে এর পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা দিতে আহ্বান জানাচ্ছি।"

বাংলাদেশেও একই ধাঁচের পুশ ইন

এ ঘটনার মাত্র কয়েকদিন আগেই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশে ৭৮ জন রোহিঙ্গা পুশ ইন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের গুজরাট থেকে ধরে এনে সুন্দরবনের নির্জন অংশে ফেলে রেখে যায় ভারতীয় বাহিনী। ১০ মে, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ এসব মানুষকে উদ্ধার করে। তাদের অনেকেই জানিয়েছে, নির্যাতন, অনাহার এবং অবহেলার শিকার হয়েছেন তারা।

আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ

এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো ভারতের প্রতি কড়া সমালোচনা করছে। ‘পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (PUCL)’ বলছে, ভারত সরকার আন্তর্জাতিক আইন ও নীতিমালার সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করছে। জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর চেয়ে ভয়ংকর ও অমানবিক কোনো পন্থা হতে পারে না। শিশু, কিশোর এমনকি ক্যানসার আক্রান্ত রোগীকেও সাগরে ফেলে দেওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের সামিল।

ভারত সরকারের নীরবতা ও সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া

ভারত সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়লে সরকারকে এ বিষয়ে জবাবদিহি করতে হতে পারে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা।



এই ঘটনা শুধু একটি দেশের মানবাধিকার চর্চার প্রশ্নই নয়, বরং গোটা বিশ্বের মানবতা, নৈতিকতা এবং শরণার্থী সুরক্ষার নীতিমালার ওপরও আঘাত হানে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এ ধরনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করা এবং ভবিষ্যতে এমন বর্বরতা যেন আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করা।

No comments found


News Card Generator