সীমান্তে ফের রক্তাক্ত সংঘর্ষ, দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে যুদ্ধের ছায়া
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে আবারও উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। সাম্প্রতিক সংঘর্ষে পাকিস্তানের অন্তত ১৩ সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন বলে মঙ্গলবার (১৪ মে) পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৬ ও ৭ মে রাতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী বিনা উসকানিতে পাকিস্তানের ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে আক্রমণ চালায়। এই হামলাগুলোকে পাকিস্তান "কাপুরুষোচিত ও বেসামরিকদের ওপর পরিচালিত নিষ্ঠুর আক্রমণ" হিসেবে উল্লেখ করেছে। নিহতদের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাও রয়েছেন, যা পরিস্থিতিকে আরও বেদনাদায়ক ও উদ্বেগজনক করে তুলেছে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী গভীর শোক প্রকাশ করে জানায়, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিহত সেনারা দেশের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন। সদ্য মৃত্যুবরণকারী দুই শহীদের নাম প্রকাশ করেছে আইএসপিআর— হাবিলদার মোহাম্মদ নাভিদ এবং বিমান বাহিনীর সিনিয়র টেকনিশিয়ান মোহাম্মদ আয়াজ। এদের মধ্যে মোহাম্মদ আয়াজ আহত অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ৭৮ জন সেনাসদস্য আহত হয়েছেন, যাঁরা সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো—এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন পাকিস্তানের ৪০ জন বেসামরিক নাগরিক এবং আহত হয়েছেন অন্তত ১২১ জন। পাকিস্তান দাবি করেছে, ভারত ইচ্ছাকৃতভাবে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় গোলাবর্ষণ করেছে।
ভারতের 'অপারেশন সিঁদুর': সামরিক প্রতিশোধের অংশ
এই সংঘর্ষের সূচনা ঘটে ৭ মে। পেহেলগামে একটি সশস্ত্র হামলার জবাবে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি প্রতিরোধমূলক অভিযানের ঘোষণা দেয়। অভিযানের অংশ হিসেবে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মিরের ৯টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানো হয়। ভারতীয় পক্ষ দাবি করে, এই হামলাগুলো ছিল সুনির্দিষ্ট এবং সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি লক্ষ্য করে।
এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও ভারতের বেশ কিছু সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালায়। এতে ভারতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। পাকিস্তান দাবি করেছে, ভারতীয় গোলা ও কামানের আঘাতে তাদের ৩৫ থেকে ৪০ জন সেনা নিহত হয়েছেন।
ভারতও জানিয়েছে, সংঘর্ষ চলাকালে তাদের ৫ সেনাসদস্য শহীদ হয়েছেন। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই আত্মত্যাগ “জাতির জন্য গর্বের প্রতীক।”
আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ ও সতর্কতা
এই নতুন সংঘর্ষ আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং কূটনৈতিক মহলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, পরিস্থিতি যদি এভাবেই চলতে থাকে তাহলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক আরও জটিল ও উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। যুদ্ধের আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কাশ্মীর ঘিরে দুই দেশের ঐতিহাসিক বিরোধ এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা ক্রমেই যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। পাল্টাপাল্টি অভিযানে এখন পর্যন্ত দুই দেশের প্রায় ৭০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। দুই দেশের সরকার এবং সেনাবাহিনী পরস্পরকে দোষারোপ করছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না।
অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা
দক্ষিণ এশিয়ায় আবারও যুদ্ধ পরিস্থিতি ফিরে আসছে কি না—এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে। সীমান্ত সংঘর্ষে সেনা এবং সাধারণ মানুষের মৃত্যু যেমন মানবিক ট্র্যাজেডি, তেমনি এটি এক ভয়াবহ কৌশলগত সংকেতও বয়ে আনছে। যদি দ্রুত রাজনৈতিক সমাধান না আসে, তবে এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আরও বড় রূপ নিতে পারে।



















