উত্তর-পশ্চিম ভারতের বিস্তৃত সীমান্তজুড়ে শুরু হয়েছে নতুন এক সামরিক উত্তেজনা। জম্মু-কাশ্মীর থেকে রাজস্থানের মরুভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে পাকিস্তান ২৬টি স্থানে চালিয়েছে ভয়াবহ ড্রোন ও আর্টিলারি হামলা। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এই হামলায় অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন।
হামলার সময়:
শুক্রবার গভীর রাতে শুরু হওয়া এই অভিযানে ব্যবহার করা হয়েছে প্রায় ৪০০টি তুরস্কে তৈরি সশস্ত্র ড্রোন ‘সোনগার’ এবং ভারি কামান। হামলার আওতায় এসেছে জম্মু, সাম্বা, পাঠানকোট, উধমপুর, নাগরোটা, বারামুলা, শ্রীনগর, আওয়ান্তিপোরা, অমৃতসর, ফিরোজপুর, ফাজিলকা, জয়সলমের, লালগড় যতন, বর্মের, ভূজ, কুয়ার বেট ও লক্ষী নালা পর্যন্ত অন্তত ২৬টি লক্ষ্যবস্তু।
কাশ্মীর ও রাজস্থানের পোখরান অঞ্চলেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। বিশেষত শ্রীনগর বিমানবন্দর ও আওয়ান্তিপোরা বিমানঘাঁটিতে চালানো ড্রোন হামলার প্রচেষ্টা ভারতীয় বাহিনী ব্যর্থ করে দেয়। সেনাবাহিনী জানায়, তারা ‘হাই অ্যালার্ট’ অবস্থায় রয়েছে এবং অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করছে।
প্রতিক্রিয়া ও স্থানীয় পরিস্থিতি:
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাতভর আকাশে একাধিক ড্রোন ঘুরতে দেখা গেছে এবং বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠেছে জনপদ। অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট গান ব্যবহারের আওয়াজে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপত্তার স্বার্থে একাধিক অঞ্চলে ব্ল্যাকআউট কার্যকর করা হয় এবং সাইরেন বাজিয়ে জনগণকে সতর্ক করা হয়। ফিরোজপুরের একটি গ্রামে বিস্ফোরণে তিনজন আহত হন, যাদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়।
কূটনৈতিক বিবৃতি:
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রী পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করে বলেন, “তারা বেসামরিক বিমানকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এবং উপাসনালয়ের ওপর হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন করেছে।”
ভারতের পাল্টা আঘাত:
উইং কমান্ডার বিয়োমিকা সিং জানান, ভারত ইতিমধ্যে পাকিস্তানের চারটি এয়ার ডিফেন্স ঘাঁটিতে পাল্টা ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে একটি ঘাঁটির রাডার ধ্বংস করা হয়েছে। তিনি জানান, টাংধার, উরি, পুঞ্চ, মেন্ধার, রাজৌরি, অখনুর এবং উধমপুরে হামলায় ভারতীয় সেনাদের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হলেও পাকিস্তান তুলনামূলকভাবে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া:
কলোনেল সোফিয়া কুরেশি বলেন, “সীমান্তের কাছাকাছি বেসামরিক বিমান ব্যবহার করে পাকিস্তান প্রমাণ করেছে তারা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে জবাব দিলেও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের নিরাপত্তা বজায় রাখার স্বার্থে সংযম দেখিয়েছে।”
ঘটনার পটভূমি:
এই উত্তেজনার সূচনা হয় গত ২২ এপ্রিল, যখন ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন প্রাণ হারান। এর দায় পাকিস্তানের ওপর চাপিয়ে ভারত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সীমান্ত পার হয়ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এতে পাকিস্তানে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এর পরপরই পাকিস্তান জবাব দেয় নতুন এক পাল্টা আক্রমণের মাধ্যমে, যার অংশ হিসেবে এই ২৬টি স্থানে হামলা চালানো হয়।
এই সামরিক উত্তেজনা ঘিরে দুদেশের মধ্যে আবারও যুদ্ধ পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, বিশেষত বেসামরিক এলাকায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের কারণে। এখন দেখার বিষয়, পরবর্তী পদক্ষেপে কোন দেশ কীভাবে কূটনৈতিক ও সামরিক ভারসাম্য বজায় রাখে।