close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ভারতে রথযাত্রায় হাতির তাণ্ডব, পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
গুজরাটের রথযাত্রায় হঠাৎ উত্তেজিত এক পুরুষ হাতির হামলায় মুহূর্তের মধ্যে সৃষ্টি হয় তীব্র আতঙ্ক। দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনে প্রশাসন, হতাহতের ঘটনা না থাকলেও আতঙ্ক ছড়ায় হাজারো ভক্তের মাঝে।..

ভারতের গুজরাট রাজ্যের রাজধানী আহমেদাবাদে ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা উৎসব প্রতিবারের মতো এবারও শুক্রবার (২৭ জুন) সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হয়। ভক্তদের ঢল নামে রাস্তায়, ঘন্টাধ্বনি, ধর্মীয় সংগীত আর রঙিন সাজে ভেসে ওঠে শহরের মূল সড়কগুলো। কিন্তু, সেই উৎসবের মাঝেই ঘটল এক চাঞ্চল্যকর ও আতঙ্কজনক ঘটনা।

খাদিয়ার দেশাই নি পোল এলাকায় সকালবেলা শুরু হওয়া হাতির শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া ১৮টি হাতির মধ্যে হঠাৎ করেই একটি পুরুষ হাতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে সেটি মূল রথের পথ ছেড়ে জনতার ভিড় লক্ষ্য করে দৌড়াতে শুরু করে। কিছুক্ষণের জন্য যেন থমকে যায় পুরো রথযাত্রার আনন্দোৎসব। ভক্তরা আতঙ্কিত হয়ে ছুটতে থাকেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।

কমলা নেহরু জুওলজিক্যাল গার্ডেনের সুপারিনটেনডেন্ট আর. কে. সাহু বলেন, “শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া হাতিগুলোর মধ্যে এটি ছিল একমাত্র পুরুষ। এমনিতে শান্ত থাকলেও জনসমাগম, শব্দ এবং উত্তেজনার কারণে হঠাৎ আচরণগত পরিবর্তন আসে সেটির মধ্যে।”

তার আরও জানান, হাতিটির আচরণ দেখে নিরাপত্তা দল দ্রুত ট্রানকুইলাইজার প্রয়োগ করে। সাথে সাথে পাশে থাকা দুইটি স্ত্রী হাতির সাহায্যে উত্তেজিত পুরুষ হাতিটিকে ভিড় থেকে আলাদা করা হয়। দক্ষ ব্যবস্থাপনার ফলে কোনো মানুষ আহত হয়নি এবং সম্পূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে।

রথযাত্রা উপলক্ষে আহমেদাবাদ প্রশাসন আগেই বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছিল। পুলিশ, পশু চিকিৎসক দল, ও ট্রেন্ড অ্যানিমেল হ্যান্ডলারদের সমন্বয়ে প্রস্তুত ছিল ইমার্জেন্সি রেসপন্স ইউনিট। ফলে যেই মুহূর্তে হাতির আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, তখনই সক্রিয় হয়ে ওঠে নিরাপত্তা বাহিনী।

আর. কে. সাহু জানান, “হাতিটি অনেক বড় এবং শক্তিশালী ছিল, কিন্তু প্রশিক্ষিত টিমের দ্রুত পদক্ষেপের জন্যই বড় কোনো দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।”

হাতির তাণ্ডব থামানো হলেও উৎসব বন্ধ হয়নি। প্রশাসনের ঘোষণায় জানানো হয়, উত্তেজিত পুরুষ হাতিটিকে সম্পূর্ণভাবে শোভাযাত্রা থেকে আলাদা রাখা হবে এবং পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। বাকি ১৭টি হাতি, যেগুলো সবই স্ত্রী, খুবই শান্তভাবে ও নির্ধারিত পথে শোভাযাত্রা সম্পন্ন করেছে।

উৎসবে অংশ নেওয়া এক ভক্ত বলেন, “আমরা খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, মনে হয়েছিল কিছু একটা হয়ে যাবে। কিন্তু প্রশাসনের কাজ দেখে স্বস্তি পেয়েছি। আর ঈশ্বরের কৃপায় কেউ আহত হয়নি।

প্রসঙ্গত, গুজরাটের আহমেদাবাদের রথযাত্রা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি সামাজিক মিলনেরও এক বিরাট উপলক্ষ। প্রতি বছর লাখো মানুষ অংশ নেয় এই আয়োজনে। ভোর থেকে শুরু করে পুরো দিন জুড়ে চলে দেবতার রথ টানা, সঙ্গীত পরিবেশন, প্রসাদ বিতরণ, ও ধর্মীয় আলোচনা।

প্রতিবছর এই আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে বিভিন্ন মঠ ও মন্দিরের মহারথ। পশু-পাখি, বিশেষত হাতি, ঘোড়া, ও ধর্মীয় বাহন হিসেবে বিভিন্ন প্রাণীও শোভাযাত্রার অংশ হয়। তবে এবার পুরুষ হাতির আচরণ দেখিয়ে দিল, সব সময় সাবধানতা ও প্রস্তুতি থাকা কতটা জরুরি।
আহমেদাবাদে রথযাত্রায় ঘটে যাওয়া হাতির তাণ্ডব উৎসবের মাঝেও এক আতঙ্কের মুহূর্ত এনে দিয়েছিল। তবে প্রশাসনের তৎপরতা এবং পেশাদার ব্যবস্থাপনায় বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। একদিকে যেমন ধর্মীয় অনুভূতির প্রতিফলন ঘটে এই রথযাত্রায়, তেমনি এমন দুর্ঘটনাগুলো ভবিষ্যতে আরও দায়িত্বশীল আয়োজনের বার্তা দেয়।

No comments found