ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের সাঙ্গারেড্ডি জেলার পাসামিলারাম শিল্প এলাকায় বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে সিগাচি কেমিক্যালস নামের একটি রাসায়নিক কারখানায় চুল্লি বিস্ফোরণের পর ঘটে যায় এক হৃদয়বিদারক অগ্নিকাণ্ড। আগুনের লেলিহান শিখা মুহূর্তেই পুরো কারখানাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিণত হয় এক মৃত্যুপুরীতে। এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৪ জন নিহত এবং ৩৫ জন গুরুতর আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
দগ্ধদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে হেলিকপ্টারে করে হায়দরাবাদ ও স্থানীয় বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কারখানার ভিতরে থাকা অনেক শ্রমিক পুড়ে ছাই হয়ে গেছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
সাঙ্গারেড্ডি জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই চারজন নিহতকে শনাক্ত করা গেছে। বাকিদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া চলছে, তবে অধিকাংশ মৃতদেহ পুড়ে এতটাই বিকৃত হয়ে গেছে যে শনাক্ত করতে সময় লাগবে। সংশ্লিষ্ট কারখানা চত্বর এখন পুলিশের নিরাপত্তা বলয়ে আবদ্ধ, যাতে উদ্ধার অভিযান ও ফরেনসিক পরীক্ষা বিঘ্নিত না হয়।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কারখানার একটি পুরনো ওভারহিটেড রিঅ্যাক্টর বা চুল্লি বিস্ফোরণের মাধ্যমে পুরো দুর্ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই তীব্র ছিল যে পার্শ্ববর্তী এলাকায় কেঁপে ওঠে বাড়িঘর। স্থানীয় লোকজন আতঙ্কে দিকবিদিক ছুটতে শুরু করেন।
তদন্তে ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের একটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT) কাজ শুরু করেছে। এছাড়াও শ্রমিকদের নিরাপত্তাব্যবস্থা কতটা মানা হয়েছিল তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কারখানার মালিকপক্ষের গাফিলতির অভিযোগও উঠছে।
ঘটনার পরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ শোক প্রকাশ করে লেখেন:তেলেঙ্গানার সাঙ্গারেড্ডিতে কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনায় আমি শোকাহত। যারা তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
এর পাশাপাশি মোদি ঘোষণা দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল (PMNRF) থেকে প্রতিটি নিহতের পরিবারকে ২ লক্ষ রুপি এবং প্রত্যেক আহতকে ৫০ হাজার রুপি করে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।
এ ঘটনায় ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শোক জানানো হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলো প্রশ্ন তুলেছে — কেন এখনও বহু কারখানায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই? তারা অবিলম্বে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দাবি করেছে।
এই দুর্ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, ভারতে এখনও অনেক শিল্পকারখানায় নিরাপত্তা প্রোটোকল মানা হয় না। শ্রমিকদের জীবন যেন সস্তা হয়ে গেছে এই পুঁজির দৌড়ে। তদন্তে যদি কারো গাফিলতি প্রমাণিত হয়, তবে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবিতে গর্জে উঠছে দেশজুড়ে সাধারণ মানুষ।



















