দীর্ঘ সময় স্থিতিশীল থাকার পর ভারতে আবারও করোনার নতুন উপধরনের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। দেশটির একাধিক রাজ্যে সম্প্রতি ওমিক্রনের বিভিন্ন রূপ—LF.7, XFG, JN.1 এবং NB.1.8.1 শনাক্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এগুলোর সংক্রমণ ক্ষমতা আগের চেয়ে বেশি এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সংক্রমণের ঝুঁকি মাথায় রেখে সীমান্তে নেওয়া হয়েছে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।
বাংলাদেশের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চলতি মাসের ৪ জুন একটি নতুন নির্দেশনা জারি করে। এতে দেশের সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, স্থলবন্দর এবং নৌবন্দরে যাত্রীদের শরীরিক পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই আদেশে স্বাক্ষর করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হোসেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভারতসহ যেসব দেশে করোনার নতুন ধরন ছড়িয়েছে, সেসব দেশ থেকে আগত সন্দেহজনক যাত্রীদের নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ লক্ষ্যে ইমিগ্রেশন ও ইন্টারন্যাশনাল হেলথ রেগুলেশন (আইএইচআর) ডেস্ককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়, যাত্রীদের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮ জুন রবিবার সকালে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, ভারত থেকে আগত প্রতিটি যাত্রীকে মেডিক্যাল ডেস্কে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার আওতায় আনা হচ্ছে। উপ-সহকারী মেডিক্যাল কর্মকর্তারা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এবং শারীরিক লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে যাচাই করছেন—তাদের মধ্যে নতুন উপধরনের কোনো উপসর্গ রয়েছে কি না।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনে দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার আব্দুল মজিদ জানান, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা প্রতিটি ভারতফেরত যাত্রীকে যাচাই করছি। কেউ জ্বর, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা শরীর ব্যথার মতো উপসর্গ জানালে আমরা তাকে আইসোলেশনে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।
ভারত ফেরত যাত্রী পরিতোষ মণ্ডল বলেন, “আমি চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলাম। পুরো সময়টায় কোথাও করোনা টেস্ট বা স্ক্রিনিং হয়নি। অথচ বাংলাদেশে ফিরেই আমাকে স্ক্রিনিংয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিষয়টি কিছুটা বিস্ময়ের হলেও প্রয়োজনীয় মনে হচ্ছে।”
অন্য এক যাত্রী সীমা রানী জানান, “ভারতে মাসখানেক চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরলাম। কোনো হাসপাতালে বা এয়ারপোর্টে করোনা নিয়ে সচেতনতা চোখে পড়েনি। বাংলাদেশে এসে দেখি আবার পরীক্ষা শুরু হয়েছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার নতুন ধরনগুলো অনেক সময় উপসর্গহীন থেকেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই সতর্কতা অবলম্বন না করলে ভবিষ্যতে দেশে নতুন ঢেউ আসতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সীমান্ত দিয়ে আগত যাত্রীদের মধ্যে যারা বয়স্ক, শিশু অথবা দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত, তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা হবে। একইসঙ্গে বিমানবন্দরে স্বয়ংক্রিয় থার্মাল স্ক্যানার ব্যবহার করে জ্বর শনাক্ত করার প্রক্রিয়া আরও জোরদার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে গত কয়েক মাস ধরে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ভারতের নতুন সংক্রমণ পরিস্থিতি ঘিরে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এর আগেও ২০২১ সালে ভারতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশে তার প্রভাব পড়েছিল। তাই সময় থাকতেই সতর্কতা নিতে চাচ্ছে সরকার।
সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সাধারণ মানুষকে মাস্ক ব্যবহার, হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষ করে যাঁরা সম্প্রতি বিদেশ থেকে এসেছেন বা তাদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাদের প্রতি বাড়তি সতর্কতা বজায় রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের রূপান্তর থেমে নেই। প্রতিবেশী ভারতে নতুন ওমিক্রন উপধরনের সংক্রমণ বাংলাদেশে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সরকার এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আগেভাগেই প্রস্তুতি গ্রহণ করছে, যার অংশ হিসেবে সীমান্তগুলোতে নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। এ মুহূর্তে প্রয়োজন জনসচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা—তাহলেই সম্ভব হবে নতুন বিপদ এড়ানো।



















