close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ভারত-পাকিস্তানের নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতা: ড্রোন যুদ্ধবিমানের যুগে পদার্পণ, সামরিক খাতে বিশাল বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির দ্বন্দ্ব তীব্র হচ্ছে..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ভারত ও পাকিস্তান ড্রোন প্রযুক্তি নিয়ে নতুনভাবে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। দশকের পর দশক চলা যুদ্ধের ধারায় এবার মানববিহীন ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে সংঘাতের নতুন মাত্রা এসেছে। দুই দেশের সামরিক খাতে কোটি কোটি ডলা..

নতুন ড্রোন যুদ্ধবিমানের যুগে ভারত-পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা

গত ৮ মে, রাত ৮টার পর জম্মু আকাশে লাল আলোর শিখা ছড়িয়ে পড়ার পেছনে ছিল ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষার মুখোমুখি পাকিস্তানের ছোড়া ড্রোন। প্রতিবেশী দেশ দুইটি দীর্ঘদিন ধরে পারস্পরিক উত্তেজনা ও সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত। তবে, মে মাসের চার দিনের সাম্প্রতিক সংঘাতে প্রথমবারের মতো তারা ড্রোন যুদ্ধ প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

দশকের পর দশক ধরে ভারত ও পাকিস্তান উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ভারী অস্ত্রের মাধ্যমে একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। কিন্তু এখন তারা মানববিহীন, বা মনুষ্যবিহীন প্রযুক্তি দিয়ে যুদ্ধের প্যাটার্ন বদলাতে চাইছে। একদম কম ঝুঁকিতে লক্ষ্যমাত্রায় আঘাত হানতে ড্রোন ব্যবহারের সম্ভাবনা তাদের উত্তেজনার মূল কারণ।


সামরিক খাতে বিশাল বিনিয়োগ, ড্রোন প্রযুক্তির আধিপত্য

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়া ভারত ও পাকিস্তান সামরিক খাতে বছরে প্রায় ৯৬ বিলিয়ন ডলার খরচ করছে। এর মধ্যে ড্রোন প্রযুক্তির দিকে বিনিয়োগ ক্রমশ বাড়ছে। ভারতের ড্রোন ফেডারেশনের স্মিত শাহ জানান, আগামী ১২ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে দেশীয় শিল্পে ৪৭০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা সাম্প্রতিক আগের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি।

ভারত সরকার চলতি মাসে সামরিক ক্রয়ে ৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের জরুরি অনুমোদন দিয়েছে, যার বড় অংশ ড্রোন যুদ্ধ এবং নজরদারীর কাজে ব্যবহার করার লক্ষ্য রয়েছে। আইডিয়াফোর্জ টেকনোলজির ভাইস-প্রেসিডেন্ট বিশাল সাক্সেনা জানান, ভারতে ড্রোন শিল্পের প্রসারে সরকার অপ্রত্যাশিতভাবে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছে।


পাকিস্তানের প্রতিরক্ষায় ড্রোনের গুরুত্ব বৃদ্ধি

পাকিস্তানও ব্যয়বহুল যুদ্ধবিমানের পরিবর্তে ড্রোন ব্যবহারে জোর দিচ্ছে। তাদের বিমান বাহিনী কীভাবে ড্রোনের সাহায্যে যুদ্ধক্ষেত্রে আধুনিকতা আনা যায়, সে বিষয়ে কাজ করছে। পাকিস্তান ইসলামাবাদের ন্যাশনাল অ্যারোস্পেস সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি ও তুরস্কের প্রতিরক্ষা ঠিকাদার বেকারের সহযোগিতায় ইহা-৩ নামক ড্রোন তৈরি করছে, যা মাত্র দুই থেকে তিন দিনে স্থানীয়ভাবে তৈরি সম্ভব।

তবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কিংবা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারও প্রকাশ্যে কিছু বলেনি।


আধুনিক যুদ্ধবিমান মোতায়েন, চীনের প্রভাব

চলতি মাসের সংঘাতে ভারত ও পাকিস্তান উন্নতমানের ৪.৫ জেনারেশনের যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে। পাকিস্তানের কাছে রয়েছে চীনের তৈরি ২০টি জে-১০ যুদ্ধবিমান, যেখানে ভারতের হাতে রয়েছে আধুনিক তিন ডজন রাফাল যুদ্ধবিমান।

পাকিস্তানের গোয়েন্দা প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ঔশি মজুমদার বলেন, ইসলামাবাদ ড্রোন গবেষণা ও উৎপাদন বাড়াতে চীন ও তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে, যা তাদের সামরিক প্রযুক্তিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।


আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যত প্রেক্ষাপট

লন্ডনের কিংস কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানি ওয়াল্টার লার্ডভিগ তৃতীয় জানান, ভারত ও পাকিস্তান বড় মাপের সামরিক সংঘাত এড়িয়ে গিয়ে ড্রোনের মাধ্যমে নিজেদের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করছে। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা প্রেক্ষাপটে নতুন ধরনের যুদ্ধবিধি গড়ে উঠতে পারে।

উল্লেখ্য, সামরিক প্রযুক্তি ও অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ড্রোন প্রযুক্তি দ্রুত বিস্তার লাভ করায়, ভবিষ্যতে এটি যুদ্ধক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণের প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠবে। এ অঞ্চলের রাজনীতির উপর এর গভীর প্রভাব পড়বে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।



ভারত-পাকিস্তানের সামরিক উত্তেজনার পেছনে এবার নতুন মাত্রা যোগ করেছে ড্রোন প্রযুক্তি। বিশাল বিনিয়োগ ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে দুই দেশই তাদের সামরিক সামর্থ্য বৃদ্ধি করছে। চীন ও তুরস্কের সঙ্গেও পাকিস্তানের সহযোগিতা, আর ভারতের ড্রোন শিল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ, দুই দেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে আরও তীব্র করেছে। ড্রোন ব্যবহারে সামরিক সংঘাতের নতুন প্যাটার্ন তৈরি হতে যাচ্ছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলবে।

کوئی تبصرہ نہیں ملا