close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

ভারত-পাকিস্তান টানাপোড়েনে আবারও পারমাণবিক হুমকিতে দক্ষিণ এশিয়া..

মোহাম্মাদ ইমরান মোল্যা avatar   
মোহাম্মাদ ইমরান মোল্যা
মোহাম্মাদ ইমরান, বিশেষ প্রতিনিধি

দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ এক ভয়াবহ সংকেত দিচ্ছে—উত্তেজনার পরিণতি হয়তো এবার আর সীমিত থাকবে না। কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারতের চালানো পাল্টা হামলা, পাকিস্তানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া ও যুদ্ধবিমানের ভূপাতন—সব মিলিয়ে এই অঞ্চলে পারমাণবিক সংঘাতের আশঙ্কা ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটির বিমানবাহিনী পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মোট ৯টি স্থানে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে (রাত ১:০৫ থেকে ১:৩০) বিমান হামলা চালায়। লক্ষ্য ছিল ‘গোয়েন্দা তথ্যভিত্তিক সন্ত্রাসী ঘাঁটি’, যা ‘সফলভাবে ধ্বংস করা হয়েছে’ বলে দাবি করা হয়।

অন্যদিকে পাকিস্তান এই হামলাকে তাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করে। দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী দাবি করেন, তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান (তিনটি রাফাল, একটি মিগ-২৯, একটি সু-৩০) ও একটি হেরন ড্রোন ভূপাতিত করেছে। যদিও ভারত এখনো এই দাবির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।

এই পাল্টা-পাল্টি অভিযানে এখন পর্যন্ত ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তানে অন্তত ২৬ জন এবং পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

কাশ্মীর উপত্যকা দীর্ঘদিন ধরেই ভারত-পাকিস্তান বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু। উভয় দেশই কাশ্মীরকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করে। ভারতীয় নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে কয়েক দশক ধরে চলা বিদ্রোহে প্রাণ হারিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। কাশ্মীর ইস্যুতে এর আগে ১৯৪৭, ১৯৬৫, ১৯৯৯ এবং ২০১৯ সালে দুই দেশের মধ্যে বড় সংঘর্ষ ঘটে। সর্বশেষ পরিস্থিতি নতুন করে সেই বিপজ্জনক বাস্তবতাকে সামনে এনে দিয়েছে।

উভয় দেশের হাতেই রয়েছে শতাধিক পারমাণবিক ওয়ারহেড। ২০২৪ সালের হিসেবে ভারতের কাছে রয়েছে আনুমানিক ১৬৪টি এবং পাকিস্তানের হাতে ১৭০টির বেশি ওয়ারহেড। ভারত ‘নো ফার্স্ট ইউজ’ নীতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অপরদিকে পাকিস্তান বরাবরই কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার ও প্রয়োজনে ‘প্রথমে আঘাত হানার’ হুমকি দিয়ে আসছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কেবল একটি ‘মিসক্যালকুলেশন’ বা ভুল অনুমানই উভয় দেশের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারে। এমন সংঘাতের প্রেক্ষিতে কয়েক কোটির বেশি মানুষের প্রাণহানি এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট ও জলবায়ু বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

এই উত্তেজনা এখন শুধু ভারত-পাকিস্তানের বিষয় নয়, এটি বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্যও হুমকিস্বরূপ। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন—সব পক্ষকেই এখন গঠনমূলক কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ ও মধ্যস্থতা করতে হবে।

ভারত ও পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনা শুধু রাজনৈতিক বা কৌশলগত ইস্যু নয়; এটি মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি ঠেকাতে হলে দুই দেশকে নিজেদের অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথেই ফিরে যেতে হবে। নয়তো দক্ষিণ এশিয়া পরিণত হবে এক অনির্দেশ্য বিপর্যয়ের মঞ্চে, যার ধাক্কা কেবল এ অঞ্চলে নয়, গোটা বিশ্বে অনুভূত হবে।

Nema komentara