close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

ভারত চেয়েছিল শক্তি দেখাতে, কিন্তু প্রকাশ পেল দুর্বলতা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
শক্তির প্রদর্শন করতে গিয়ে কূটনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে যুদ্ধবিরতি হলেও প্রশ্ন উঠছে—কেন নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে পারল না মোদি সরকার? কী বলছে বিশ্লেষকরা?..

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধাবস্থা: শক্তি দেখাতে গিয়ে কৌশলগতভাবে পিছিয়ে পড়ল ভারত

দক্ষিণ এশিয়ায় কয়েকদিন ধরে চলমান ভারত-পাকিস্তান সামরিক উত্তেজনা হঠাৎ করেই থেমে যায় ১০ মে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে “পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি” হয়েছে এবং এতে তাঁর প্রশাসনের ভূমিকা ছিল মুখ্য।

মার্কিন প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ ছাড়া এই যুদ্ধবিরতি সম্ভব হতো না বলেই মনে করছে ওয়াশিংটন। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং চিফ অব স্টাফ স্যুজি ওয়াইলস সরাসরি মোদি প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জরুরি সতর্কবার্তা পাঠিয়ে জেডি ভ্যান্স জানান, পাকিস্তানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘাত ভারতের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

একই সময়, পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার পরামর্শ দেওয়া হয় ভারতকে। ফলে যুদ্ধবিরতির খবরে বিশ্বব্যাপী কিছুটা স্বস্তি দেখা দিলেও ভারতীয় রাজনীতিতে এই বিষয়টি সমালোচনার জন্ম দেয়।

ভারতের প্রভাবশালী সাবেক সেনাপ্রধান ভেদ প্রকাশ মালিক মন্তব্য করেন—এই যুদ্ধবিরতির রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাভ নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠবেই। একইসঙ্গে সংসদ সদস্য আসাদুদ্দিন ওয়াইসি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যুদ্ধবিরতির ঘোষণা ভারতের মুখ থেকে আসা উচিত ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে নয়।”

এই সমালোচনার পেছনে রয়েছে ভারতের দীর্ঘদিনের নীতি—তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ এড়িয়ে চলা। ট্রাম্পের সরাসরি মন্তব্য, যেখানে তিনি কাশ্মির ইস্যুকে “হাজার বছরের সমস্যা” হিসেবে উল্লেখ করে সমাধানে সহায়তার কথা বলেন, তাতে ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান আরও বিব্রতকর হয়ে ওঠে।

অভিযান ও প্রতিক্রিয়া: ব্যর্থ ‘অপারেশন সিন্দুর’?

কাশ্মিরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিল এক হামলার পর ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল ‘অপারেশন সিন্দুর’—পাকিস্তানের অভ্যন্তরে কথিত সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে রাফাল যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা। এই হামলাকে মোদি প্রশাসনের শক্তির প্রদর্শন হিসেবে তুলে ধরা হলেও, বাস্তব চিত্র ছিল ভিন্ন।

পাকিস্তান জানায়, এই হামলায় বেসামরিক মানুষ, এমনকি শিশুও নিহত হয়েছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান তাদের নিজস্ব যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতের হামলা প্রতিহত করে এবং দাবি করে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে তিনটি ছিল বহুল আলোচিত ‘রাফাল’।

দুই মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে জানা যায়, পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ যুদ্ধবিমান দিয়ে দুটি রাফাল ধ্বংস করেছে এবং এই পুরো অভিযানে চীনের গোয়েন্দা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা ছিল। যদিও ভারত এখনো কোনো বিমান হারানোর কথা স্বীকার করেনি।

চীনা প্রভাব ও তথ্য যুদ্ধে ভারতের ব্যাকফুট

পাকিস্তান-চীন যৌথ সামরিক সহযোগিতা এই যুদ্ধে বড় ভূমিকা রাখে। ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের ৮১ শতাংশ অস্ত্র সরবরাহ করছে চীন। পাকিস্তানের সাড়ে ১২৫টি যুদ্ধবিমান পাল্টা হামলায় অংশ নেয়, এবং তারা ভারতের আদমপুর, ভুজ, উধামপুর ও পাঠানকোট ঘাঁটিতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।

এতে শুধু সামরিক নয়, বেসামরিক স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাফাল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার ঘটনায় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান দাসোর শেয়ারে ধস নামে, আন্তর্জাতিক বাজারেও ভারতের সামরিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

চীনা প্রযুক্তির জে-১০সি যুদ্ধবিমান ও রাডার ব্যবস্থাপনার সাফল্য রাফালের কার্যকারিতা নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে। ভারতের নিজস্ব সংবাদমাধ্যমগুলো শুরুতে বড় ধরনের সাফল্যের দাবি করলেও পরে স্বীকার করে, অনেক খবর ছিল বাস্তবতার বাইরে এবং ছিল প্রচারণাভিত্তিক।

ভবিষ্যতের পথে: অর্থনীতি, কূটনীতি ও বাস্তবতা

বর্তমান পরিস্থিতি ভারতের আঞ্চলিক নেতৃত্বের ভাবমূর্তিকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, চীনের প্রযুক্তি-সহায়তা পাওয়া পাকিস্তান এখন কৌশলগত দিক থেকে অনেক বেশি প্রস্তুত। আর ভারতের রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র-নির্ভর কৌশল নানা সীমাবদ্ধতায় জর্জরিত।

বিশ্লেষক ইউসুফ নজর, যিনি সিটিগ্রুপের প্রাক্তন নির্বাহী এবং ‘দ্য গ্যাদারিং স্টর্ম’ বইয়ের লেখক, মনে করেন এই পরিস্থিতি ভারতকে শুধু সামরিক নয়, কূটনৈতিকভাবেও নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করবে। তিনি বলেন, "সামরিক উত্তেজনার বদলে কৌশলগত সংযমই হতে পারে স্থিতিশীলতার মূল চাবিকাঠি।"

দিল্লির প্রতিক্রিয়ায় সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানো এবং কাশ্মিরে সামরিকীকরণ বাড়ানোর কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সেটা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলতে পারে।

যেখানে দুই দেশের মিলিত জনসংখ্যার একটি বড় অংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে এবং দুই দেশই অর্থনৈতিক চাপে রয়েছে, সেখানে দীর্ঘমেয়াদী সংঘাত শুধু ক্ষয়ক্ষতিই বাড়াবে।

No se encontraron comentarios