ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় আট দিন ধরে আটকিয়ে রাখা এক যুবককে উদ্ধার করেছে যৌথবাহিনী। উদ্ধার হওয়া যুবকের নাম জামালউদ্দিন (৩২), বাড়ি শেরপুর জেলার নলিতাবাড়ি উপজেলার বাগকুচি গ্রামে। অভিযানে আটক করা হয়েছে শফিকুল ইসলাম (৩০) নামের এক ব্যক্তিকে, যিনি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়নের পশ্চিম আলগী গ্রামের বাসিন্দা।
জানা গেছে, রবিবার (২৯ জুন) রাত ১১টার দিকে যৌথবাহিনীর ক্যাম্প থেকে ক্যাপ্টেন আজমাইন হোসেনের নেতৃত্বে একটি অভিযান চালানো হয়। সেই অভিযানে শফিকুল ইসলামের বাড়ি থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয় জামালউদ্দিনকে, যিনি আট দিন ধরে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে ছিলেন।
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফ হোসেন জানান, “ভিকটিম জামালউদ্দিনের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে সোমবার (৩০ জুন) আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।”
ঘটনার পেছনে লুকিয়ে রয়েছে এক ভয়াবহ প্রতারণার গল্প। শফিকুল ইসলাম স্বীকার করেছেন, তিনি পাঁচ মাস আগে জামালউদ্দিনকে মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে তার কাছ থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। এরপর দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অজুহাতে টালবাহানা করতে থাকেন। শেষমেশ, টাকা ফেরতের চাপ এড়াতে জামালউদ্দিনকে নিজ বাড়িতে আটকে রাখেন বলে দাবি করেছেন তিনি।
তবে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, এটি শুধুই প্রতারণা নয়, বরং অপহরণ ও জিম্মি করে অর্থ আদায়ের একটি সুপরিকল্পিত ফাঁদ।
জামালউদ্দিনের স্ত্রী নাসিমা বেগমের অভিযোগেই এই নাটকীয় উদ্ধার সম্ভব হয়েছে। তিনি ফরিদপুর যৌথবাহিনী ক্যাম্পে এসে জানান, তার স্বামী আট দিন ধরে নিখোঁজ, এবং তিনি সন্দেহ করছেন যে শফিকুল ইসলাম তাকে আটকে রেখেছেন। যৌথবাহিনী অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করে।
যৌথবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, গোপন তথ্য ও সরেজমিন অনুসন্ধানে আমরা নিশ্চিত হই যে জামালউদ্দিনকে পশ্চিম আলগীতে আটকে রাখা হয়েছে। তারপরই অভিযান চালানো হয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামবাসীরা বলছেন, শফিকুল ইসলাম সাধারণত শান্ত স্বভাবের লোক হিসেবে পরিচিত হলেও তার এমন প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড সবাইকে হতবাক করেছে।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত চলছে। মামলাটি অপহরণ, অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার ধারায় রেকর্ড করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এটি মানব পাচারের একটি উদাহরণ হতে পারে। অনেক সময় বিদেশে পাঠানোর লোভ দেখিয়ে দালালচক্র সাধারণ মানুষকে এমনভাবে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। প্রশাসন সবাইকে এই ধরনের প্রতারণা থেকে সাবধান থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় এই ভয়াবহ ঘটনা শুধু এক ব্যক্তির নয়, বরং প্রমাণ করে মানব পাচার ও প্রতারণার জাল কতটা বিস্তৃত হতে পারে। প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ ও একটি সাহসী স্ত্রীর উদ্যোগে এই উদ্ধার সম্ভব হয়েছে। এখন প্রয়োজন কঠোর বিচার এবং ভবিষ্যতে এমন প্রতারণা রুখতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি।



















