পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ভেঙে গভীর রাতে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন ও সেই কর্মকাণ্ড ফেসবুকে প্রচার করার দায়ে তিন ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নিষিদ্ধ ঘোষিত দলীয় ব্যানারে কেক কেটে উদযাপনের ভিডিও ভাইরাল হতেই পুলিশি তৎপরতায় বুধবার ভোরে তাদের আটক করা হয়।
সোমবার (২৩ জুন) রাত গভীরেই উপজেলার বগা ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামে ঘটেছিল ঘটনাটি। নিষিদ্ধ ঘোষিত উপজেলা ছাত্রলীগের ব্যানারে আয়োজন করা হয় আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। কেক কাটা, স্লোগান, ব্যানার—সবই ছিল সেই আয়োজনে। যা দেখে বোঝার উপায় ছিল না, এটি কোনো গোপন আয়োজন।
তবে রাত পেরোতেই সেই উদযাপনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায় পোস্টটি। বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের, এবং পরদিনই নড়েচড়ে বসে বাউফল থানা।
বুধবার (২৫ জুন) ভোররাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বগা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে তিনজন ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন:
-
রোমান হাওলাদার (৩০) — বগা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক
-
মো. তাসনিম (১৯) — ছাত্রলীগ কর্মী
-
মো. জাহিদ খান (৩৪) — ছাত্রলীগ কর্মী
তাদের প্রত্যেকেই স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় এবং অতীতে একাধিক মিছিল-মিটিংয়েও অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাউফল উপজেলা ছাত্রলীগকে পূর্বে রাজনৈতিক সহিংসতা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সেই সংগঠনের ব্যানারে আবারো দলীয় কর্মসূচি পালনের ঘটনা সরকারি নির্দেশনার সরাসরি লঙ্ঘন বলে মনে করছে প্রশাসন।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান সরকার বলেন:তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর ৮/৯/১০/১২/১৩ ধারা অনুযায়ী মামলা রুজু করা হয়েছে। আজই তাদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৮ থেকে ১৩ ধারা সাধারণত যেসব অপরাধের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হয়, তা হলো:
-
নিষিদ্ধ সংগঠনের পক্ষে প্রচারণা
-
রাষ্ট্রবিরোধী কর্মসূচি
-
গোপনে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা
-
সমাজে উসকানিমূলক বার্তা প্রচার
এই ঘটনার ক্ষেত্রেও পুলিশ মনে করছে, উদ্দেশ্য ছিল “সংগঠনের অস্তিত্ব বজায় রাখা” এবং “গোপন রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া”।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা শুধু ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া নয়—বরং এটি একটি সুপরিকল্পিত দলের কার্যক্রমের বহিঃপ্রকাশ, যা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চালিয়ে যাচ্ছিল একটি অংশ।
ঘটনার ভিডিও এবং গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ফেসবুক, টিকটক ও স্থানীয় পেইজগুলোতে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। কেউ বলছেন—“তরুণদের বিরুদ্ধে এত কঠোর হওয়া উচিত হয়নি”, আবার অনেকে বলছেন—“আইন সবার জন্য সমান, নিষেধ অমান্য করলে শাস্তি হবেই”।
এই ঘটনার পর আবারো স্পষ্ট হলো—ফেসবুক বা অন্য কোনো মাধ্যমে গোপন তৎপরতা প্রকাশ পেলেই, নজর এড়ানো যাবে না। প্রশাসন এখন আরো বেশি সতর্ক এবং রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে। ফলে আগামীতে এমন উদ্যোগের আগে অনেকেই এখন ভাববেন দ্বিতীয়বার।



















