বাংলাদেশের ট্রানজিট না দিলে সেভেন সিস্টার্সে সংযোগহীনতা বাড়বে পরে যেতে পারে বীপাকে


ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগের মানোন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ থেকে ইন্টারনেট ট্রানজিটের দ্বিতীয় পরিকল্পনা বাতিল করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
এই সিদ্ধান্তের ফলে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ইন্টারনেট পরিকাঠামো এবং বিকল্প ব্যবস্থার গুরুত্ব। যদিও ভারতের বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিকল্পনা বাতিল হলেও ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের ব্যাকগ্রাউন্ড
পরিকল্পনা অনুযায়ী, সিঙ্গাপুর থেকে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ব্যান্ডউইডথ বাংলাদেশে আসত। এরপর আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে ত্রিপুরা হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তা পৌঁছে যেত। বাংলাদেশের সামিট কমিউনিকেশনস এবং ফাইবার@হোম এই প্রকল্পের আবেদন করেছিল। তবে বিটিআরসির গাইডলাইন অনুযায়ী, কোনো 'ট্রানজিট' সুবিধা অনুমোদন করা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান মুহাম্মদ এমদাদুল বারি স্পষ্ট করে জানান, বাংলাদেশ এই ধরণের ট্রানজিট ব্যবস্থার বিরোধী। পাশাপাশি বাংলাদেশের আঞ্চলিক ইন্টারনেট হাব হওয়ার সম্ভাবনা নষ্ট হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়।
ভারতের পরিকাঠামোর শক্তিশালী বিকল্প প্রস্তুত
ভারত ইতোমধ্যে নিজস্ব ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে বিশাল পরিকাঠামো গড়ে তুলেছে। পশ্চিমবঙ্গের দীঘাতে তৈরি হচ্ছে নতুন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন, যা দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পৌঁছে দিতে সক্ষম।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই অঞ্চলে ইতোমধ্যে সফটওয়্যার পার্ক এবং ডেটা সেন্টার স্থাপন শুরু হয়েছে। আসামে গড়ে উঠছে এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম হাইপার-স্কেল ডেটা সেন্টার। টাটা গ্রুপ ২৭ হাজার কোটি রুপির সেমিকন্ডাক্টর কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনাও নিয়েছে।
শীর্ষ তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তর-পূর্বে ইন্টারনেট সংযোগের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী। কলকাতা থেকে পশ্চিমবঙ্গের দীঘা হয়ে ফাইবার অপটিক লাইন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সংযোগ নিশ্চিত করছে।
"বাংলাদেশের সংযোগ শুধুই একটি বিকল্প ছিল"
বিশ্লেষক প্রতিম রঞ্জন বসু বলেন, “উত্তর-পূর্ব ভারতের ইন্টারনেট পরিকাঠামো এখন যথেষ্ট মজবুত। বাংলাদেশ থেকে আসা প্রস্তাবিত সংযোগটি একটি ব্যাকআপ মাত্র। পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখন দ্রুতগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করা হচ্ছে। তাই বাংলাদেশ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন না করলেও উত্তর-পূর্বে ইন্টারনেটের কোনো বড় সংকট তৈরি হবে না।”
ত্রিপুরার সংযোগ এখনো চালু
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে ত্রিপুরা হয়ে বাংলাদেশ থেকে ইন্টারনেট সংযোগ চালু হয়। এটি উত্তর-পূর্ব ভারতের একমাত্র আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে। তবে এই সংযোগ মাত্র ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ করে, যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সামগ্রিক চাহিদার একটি ছোট অংশ। ভারতের বিভিন্ন ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে বর্তমানে ১১১ টিবিপিএসের বেশি ডেটা প্রবাহিত হচ্ছে।
উত্তর-পূর্ব ভারতের তথ্যপ্রযুক্তির উত্থান
গত দশ বছরে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ন্যাশনাল অপটিক্যাল ফাইবার মিশনের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে। আসামের তিনসুকিয়া জেলার মতো এলাকায় যেখানে একসময় মোবাইল সংযোগের জন্য গাছের ওপরে উঠতে হত, সেখানে এখন অবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা চালু হয়েছে।
শিল্প-বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “নতুন চাকরি তৈরির জন্য বিপিও শিল্প গড়ে উঠছে, যা বাড়তি ব্যান্ডউইডথের চাহিদা বাড়াবে। কিন্তু বর্তমানে উত্তর-পূর্ব ভারতের পরিকাঠামো এতটাই উন্নত যে বাংলাদেশ থেকে সংযোগ না এলেও কোনো সমস্যা হবে না।”
উপসংহার
বাংলাদেশের ট্রানজিট বাতিলের সিদ্ধান্ত একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত। তবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের শক্তিশালী বিকল্প ব্যবস্থা থাকার ফলে এই অঞ্চলে বড় কোনো প্রভাব পড়বে না। ভারত ইতোমধ্যেই পরিকাঠামোতে বিপুল বিনিয়োগ করে রেখেছে এবং ভবিষ্যতের চাহিদা মেটাতে প্রস্তুত রয়েছে।
نظری یافت نشد