বাংলাদেশের প্রকৃত উন্নয়ন

Bokhtiar Shamim avatar   
Bokhtiar Shamim
বাংলাদেশের প্রকৃত উন্নয়নসা

র্বভৌমত্ব, শক্তি এবং স্বনির্ভরতার পথে একটি জাতীয় আহ্বান..

বাংলাদেশের প্রকৃত উন্নয়নসা

র্বভৌমত্ব, শক্তি এবং স্বনির্ভরতার পথে একটি জাতীয় আহ্বান

 

বাংলাদেশের স্বাধীন সার্বভৌমত্ব নিয়ে ইতমধ্যে যৌবনের ৫৪ বছর পেরিয়ে গেছে। এই দীর্ঘ সময়ে আমরা অনেক কিছুই যেমন অর্জন করেছি, কিন্তু সেক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি অনেক কিছুতে পিছিয়ে রয়েছি। বিশেষ করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শক্তিশালী স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র নীতি এবং প্রতিরক্ষা শিল্পের ক্ষেত্রে আমরা এখনও পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় অনেক পিছনে। অস্ত্রশিল্পে আমাদের অগ্রগতি প্রায় শূন্যের কোঠায়। কেন এমন হলো? (শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান অস্ত্রশিল্পকে উন্নত করার জন্য বাংলাদেশের গাজীপুরের শিমুলতলীতে অস্ত্রগার নির্মাণ করেছিলেন তিনি একমাত্র নেতা বুঝতে পেরেছিলেন বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় এবং ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে হলে কি প্রয়োজন আর এই জন্য তাকে জীবন দিয়ে মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে) কারণ দীর্ঘদিন ধরে দেশের শাসকগোষ্ঠী, যারা প্রায়শই বিদেশি প্রভাবের অধীনে ছিল, এই সেক্টরে বিনিয়োগ করতে দেয়নি। বিশেষ করে ভারতীয় আধিপত্যবাদের প্রভাবে নিয়োজিত একটি শাসকগোষ্ঠী এই শিল্পের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তারা চেয়েছে বাংলাদেশ সবসময় নির্ভরশীল থাকুক, স্বয়ংসম্পূর্ণ না হোক।

উন্নয়নের সংজ্ঞা আমরা অনেকে অনেক ভাবে দিতে পারি তবে আপনাকে প্রশ্ন করছি উন্নয়নের সংজ্ঞা কী? অনেকে বলেন, রাস্তাঘাট, সেতু, ফ্লাইওভার এগুলোই উন্নয়ন। অবকাঠামো নির্মাণকে উন্নয়নের একমাত্র মাপকাঠি বানিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে জাতিকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসকদের আমলে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের শাসনকালে, এই অবকাঠামোর উন্নয়নকে বারবার প্রচার করা হয়েছে। টেলিভিশন, সংবাদপত্র, সোশ্যাল মিডিয়ায় গান গেয়ে, ছবি দেখিয়ে বলা হয়েছে দেখো, বাংলাদেশ কত উন্নত হয়েছে! পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে এগুলো দেখিয়ে জাতিকে ঘুম পাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বাঙালি জাতি, যারা অনেক সময় নির্বোধের মতো বিশ্বাস করে ফেলে, এই প্রচারণায় ভেসে গিয়েছে প্রত্যেকটি মিডিয়া এবং তাদের প্রচার বাহিনী দ্বারা। তারা জানত না যে প্রকৃত উন্নয়নের সংজ্ঞা অন্য। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা উন্নয়ন, অর্থনীতির শক্তি উন্নয়ন, কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা শক্তি এবং সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা ছাড়া কোনো উন্নয়ন টেকসই নয়।

একবার চিন্তা করে দেখুন, এই অবকাঠামোগুলো কতটা ভঙ্গুর! ভারতের মতো একটি প্রতিবেশী শত্রু রাষ্ট্র যদি চায়, মাত্র ২৪টি মিসাইল ছুড়ে এই সবকিছু ধ্বংস করে দিতে পারে। দীর্ঘ বছরের পরিশ্রমে গড়া সেতু, রাস্তা, ভবন সবকিছু মুহূর্তে ছাই হয়ে যাবে। তাহলে এই উন্নয়নের মূল্য কী? এটা তো শুধু চোখের পর্দা! প্রকৃত উন্নয়ন হলো এমন শক্তি অর্জন যাতে কোনো শত্রু এমন সাহস না পায়। ভারতের পাশে থেকে আমরা কখনো শুধু অবকাঠামোর দিকে ঝুঁকতে পারি না। আমাদের উন্নয়নের দিকটা অন্য হওয়া দরকার স্বনির্ভরতা, প্রতিরক্ষা শক্তি এবং শক্তিশালী পররাষ্ট্র নীতি।

বাংলাদেশের এই মুহূর্তে যা দরকার, তা হলো একটি ব্যাপক জাতীয় জাগরণ। আমাদের বুঝতে হবে যে উন্নয়ন শুধু বাহ্যিক চাকচিক্য নয়, ভেতরের শক্তি। প্রথমত, অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা। আমরা খাদ্যে অনেকটা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, কিন্তু শিল্পে, প্রযুক্তিতে, এনার্জিতে এখনও নির্ভরশীল। আমাদের নিজস্ব শিল্প গড়ে তুলতে হবে যাতে বিদেশি আমদানির উপর নির্ভর না করতে হয়। দ্বিতীয়ত, সেনাবাহিনীর শক্তিশালীকরণ। আমাদের সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে সম্মানিত এবং পেশাদার, কিন্তু আরও আধুনিক প্রশিক্ষণ, উন্নত অস্ত্র এবং সংগঠনের মাধ্যমে তাদের আরও শক্তিশালী করতে হবে। তৃতীয়ত, বিমানবাহিনীকে নতুন প্রজন্মের যুদ্ধবিমান, মিসাইল সিস্টেম এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে আকাশের রক্ষক বানাতে হবে।

চতুর্থত, ড্রোন শিল্পে আমরা অনেক পিছিয়ে। পৃথিবীতে তুরস্ক এবং ইরান এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে। তুরস্কের বায়রাক্তার ড্রোন বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত, ইরানের শাহেদ ড্রোনও শক্তিশালী। আমাদের এই দুই দেশের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। প্রযুক্তি হস্তান্তর, যৌথ উৎপাদনের চুক্তি করতে হবে যাতে তাদের প্রযুক্তি আমাদের হয়। এতে আমরা নিজেরাই ড্রোন তৈরি করতে পারব, যা আধুনিক যুদ্ধে অপরিহার্য। পঞ্চমত, শক্তিশালী পররাষ্ট্র নীতি। আমরা শুধু একদিকে ঝুঁকে থাকতে পারি না। ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রাশিয়া, চীন, তুরস্ক, ইরানের সাথে গভীর সম্পর্ক গড়তে হবে। রাশিয়ার সাথে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম যেমন এস-৪০০, আধুনিক যুদ্ধবিমান এবং যৌথ অস্ত্র উৎপাদনের চুক্তি করতে হবে। এতে আমাদের প্রতিরক্ষা অভেদ্য হয়ে উঠবে।

ষষ্ঠত, অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক। আমরা ইউরোপের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রক্ষা করব, যাতে তারা আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেয়। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে প্রযুক্তি এবং বিনিয়োগের চুক্তি করতে হবে। কিন্তু এসব সম্পর্ক হবে সমান্তরাল কোনো একটি দেশের উপর নির্ভর করে নয়। আমাদের পররাষ্ট্র নীতি হবে বহুমুখী, যাতে কোনো শক্তি আমাদের উপর চাপ দিতে না পারে।

এছাড়া আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর আছে যা আমরা অবহেলা করেছি। প্রথমত, সাইবার সিকিউরিটি। আধুনিক যুদ্ধ শুধু মাটিতে নয়, সাইবার স্পেসেও। আমাদের সাইবার প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতে হবে। হ্যাকিং, ডেটা চুরি থেকে রক্ষা করার জন্য নিজস্ব সাইবার আর্মি গড়ে তুলতে হবে। চীন এবং রাশিয়ার মতো দেশ থেকে এই প্রযুক্তি নেওয়া যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করা। বঙ্গোপসাগর আমাদের সম্পদের ভাণ্ডার, কিন্তু আমাদের নৌবাহিনী এখনও দুর্বল। সাবমেরিন, যুদ্ধজাহাজ, মিসাইল বোট এগুলোতে বিনিয়োগ করতে হবে। তুরস্ক এবং চীনের সাথে এই ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা যায়।

তৃতীয়ত, গোয়েন্দা সংস্থার শক্তিশালীকরণ। আমাদের গোয়েন্দা বাহিনীকে আরও পেশাদার এবং প্রযুক্তিনির্ভর করতে হবে। বিদেশি এজেন্টদের চিহ্নিত করা এবং নির্মূল করার ক্ষমতা বাড়াতে হবে। চতুর্থত, শিক্ষা এবং গবেষণায় বিনিয়োগ। প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী দরকার। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রতিরক্ষা গবেষণার কেন্দ্র বানাতে হবে। পঞ্চমত, জনসচেতনতা। জাতিকে বোঝাতে হবে যে প্রকৃত উন্নয়ন কী। মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই বার্তা ছড়াতে হবে।

এই সবকিছু করতে গেলে আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে। আমরা দীর্ঘদিন নির্ভরশীলতায় অভ্যস্ত হয়ে গেছি। ভারতীয় প্রভাবের কারণে অনেকে ভয় পায় শক্তিশালী হতে। কিন্তু ইতিহাস দেখুন ভিয়েতনাম, ইরান, উত্তর কোরিয়া এরা সবাই প্রতিরক্ষা শক্তি গড়ে সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছে। তুরস্ক এখন ড্রোন শক্তি দিয়ে বিশ্বে প্রভাব বিস্তার করছে। আমরাও পারি। যখন আমাদের পায়ের তলার মাটি শক্ত হবে, তখন কোনো শক্তিশালী দেশ আমাদের দিকে তাকিয়ে কথা বলার সাহস পাবে না।

বাংলাদেশের এই জাগরণ বিশ্ব ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে। একটি ছোট দেশ কীভাবে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বনির্ভর হয় এটা অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য অনুপ্রেরণা হবে। আমাদের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই পথে চলতে হবে। যুবকরা, ছাত্ররা, সেনাবাহিনী, বুদ্ধিজীবী সবাই মিলে এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে বাংলাদেশ হবে একটি শক্তিশালী, সমৃদ্ধ এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র।

Комментариев нет


News Card Generator