close
লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!
عنوان: বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের নতুন যুগ: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার মুখোমুখি অন্তর্বর্তী সরকার


থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদায়ের পর, অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নতুন জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন সরকার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সরকারের সমর্থকরা আশা করছেন, এই নির্বাচন কেবল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করবে না, বরং স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনা করবে। তবে এ পথ সহজ নয়, কারণ দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও বৈদেশিক চাপের মুখে নতুন সরকারের সামনে বিশাল চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।
আওয়ামী লীগের পতন ও নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা
শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনের পর আওয়ামী লীগ এখন রাজনৈতিকভাবে প্রান্তিক পর্যায়ে চলে গেছে। এর ফলে প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক সংস্কারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে হাসিনা সরকারের পতনের পর যে বিপুল জনসমর্থন অন্তর্বর্তী সরকার পেয়েছিল, তা ধীরে ধীরে কমে আসছে।
ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার এখন বিরোধী দল, ছাত্র সংগঠন, ইসলামপন্থী গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন পক্ষের চাপে রয়েছে। পাশাপাশি সরকারের নীতিনির্ধারণী ও প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়ে জনসাধারণের অসন্তোষও বাড়ছে। নতুন সরকারের সামনে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রতিবেশী ভারতের ভূমিকা
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে এসেছে। শেখ হাসিনার সরকার ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে কাজ করেছিল, কিন্তু নতুন সরকারকে সেই সম্পর্ক রক্ষা করেই এগোতে হবে। ভারতের সাথে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকট ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা
নতুন সরকারকে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি মানবিক সংকটও মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বাংলাদেশে আশ্রিত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমস্যা এখনো সমাধান হয়নি। পাশাপাশি, যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারের সীমান্তে অস্থিরতা ক্রমেই বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারকে কৌশলী পদক্ষেপ নিতে হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ইইউ ও এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উচিত অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমকে সমর্থন করা এবং উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক সফর আয়োজন করা।
ড. ইউনূস প্রশাসনের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য ইইউর আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য নতুন চুক্তির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করা।
নতুন সরকারের সামনে করণীয়
✅ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক মিশন: ২০২৬ সালের নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
✅ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা: আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোর সহায়তা নিয়ে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানো এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
✅ মানবাধিকার সুরক্ষা: নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা।
উপসংহার
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ এখনো শেষ হয়নি। নতুন সরকার একদিকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিচক্ষণ কৌশল গ্রহণ করতে হবে। গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনগণের আস্থা অর্জনই হতে পারে নতুন সরকারের দীর্ঘমেয়াদী সফলতার চাবিকাঠি।
Ingen kommentarer fundet