বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কাজের নতুন এক দিগন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে। দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন জ্যঁ পেম, যিনি বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য নতুন ডিভিশন ডিরেক্টর হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার থেকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এই দায়িত্ব পালন শুরু করবেন।
বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে সোমবার প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। জানা গেছে, ‘ডিভিশন ডিরেক্টর’ পদটি বিশ্বব্যাংকে একধরনের নতুন সাংগঠনিক কাঠামো। কোনো কর্মকর্তা একাধিক দেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে তাকে ডিভিশন ডিরেক্টর হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য একসাথে এই দায়িত্ব পেয়েছেন জ্যঁ পেম।
ফরাসি নাগরিক জ্যঁ পেম ২০০৩ সালে বিশ্বব্যাংকে যোগ দেন। শুরু করেছিলেন সিনিয়র অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ হিসেবে। এরপর ধাপে ধাপে তিনি বিভিন্ন অঞ্চল ও খাতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার আর্থিক খাত সংস্কারে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বর্তমান দায়িত্বে আসার আগে তিনি ছিলেন বিশ্বব্যাংকের ফাইন্যান্স গ্লোবাল ডিরেক্টর। এ দায়িত্বে থাকাকালীন তিনি বৈশ্বিকভাবে আর্থিক স্থিতিশীলতা, টেকসই অর্থনৈতিক কাঠামো এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক ব্যবস্থার উপর কাজ করেছেন। তাঁর এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে অর্থনৈতিক কৌশল বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে আসার বিষয়টি নিয়ে এক বিবৃতিতে জ্যঁ পেম বলেন,বাংলাদেশ বারবার নিজেদের উদ্ভাবনী শক্তি, দৃঢ় সংকল্প এবং সহনশীলতা দিয়ে উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবাইকে বিস্মিত করেছে। আমি এই দেশের জনগণ ও সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার অপেক্ষায় আছি, যেন দেশটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির গতি ধরে রাখতে পারে।
তিনি আরও বলেন,আমরা এ দেশের বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ বাড়াতে চাই, যাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এ লক্ষ্যে আমরা সরকারের সঙ্গে নীতিগত সহযোগিতা আরও জোরদার করব।
বিশ্বব্যাংক স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী। ইতোমধ্যে তারা বাংলাদেশকে দিয়েছে ৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার সমপরিমাণ অনুদান ও ঋণ। এর মধ্যে অনুদান, সুদমুক্ত এবং স্বল্পসুদে ঋণের সংমিশ্রণে মোট ৪৬ বিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে সংস্থাটি। বর্তমানে বাংলাদেশে তাদের প্রায় ১ হাজার ৫৪০ কোটি ডলারের ঋণ প্রকল্প চলমান রয়েছে, যার আওতায় আছে অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ও ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্যঁ পেমের অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। বিশেষ করে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সময় তার নেতৃত্ব বিশ্বব্যাংকের সহায়তাকে আরও কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক করে তুলবে।
বাংলাদেশ সরকারও বিশ্বব্যাংকের এই নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানিয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এই দায়িত্ব বদলের মাধ্যমে নতুন অনেক সম্ভাবনার দ্বার খুলবে।জ্যঁ পেমের নিয়োগ বাংলাদেশের জন্য কেবল একজন নতুন কর্মকর্তা পাওয়ার ঘটনা নয়, বরং এটি দেশের অর্থনৈতিক কৌশলে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে। আগামী দিনে বিশ্বব্যাংক-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের এই সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলেই আশা।
		
				
			


















