বাংলাদেশ সীমা'ন্তে আই এ'স আ'ই আর জ'ঙ্গি আনাগোনা বাড়ছে :ভা'রতের সেনা' প্রধান..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করলেও নতুন করে সন্দেহের তালিকায় যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত! ভারতের সেনাপ্রধানের ভাষ্য—আইএসআই ও জঙ্গিদের গোপন তৎপরতা বাংলাদেশের..

কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ভারতীয় সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ওই হামলার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা সরাসরি পাকিস্তানের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর দিকে আঙুল তুললেও এখন আরও বিস্তৃত অঞ্চলকে সংশ্লিষ্ট করে দেখা হচ্ছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় আইএসআই এবং চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।

ভারতের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানান, “বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা পাঁচটি রাজ্যে চরমপন্থী কার্যকলাপের আলামত মিলছে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের ভেতরে জঙ্গি অনুপ্রবেশে সহায়তা করছে।”

সীমান্তে নজিরবিহীন সেনা তৎপরতা

এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকার সীমান্তে কৌশলগত শক্তি বাড়ানোর ব্যাপারে আর কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না। বাংলাদেশ সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্যে ৪,০৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে বিএসএফের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও সরাসরি মাঠে নেমেছে। গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছে নাইটভিশন ক্যামেরা, সর্বাধুনিক ড্রোন এবং সার্বক্ষণিক কাজ করা সিসিটিভি সিস্টেম।

বিশেষত সীমান্তের ৩,১৮০ কিলোমিটার অরক্ষিত এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত নজরদারি চালানো হচ্ছে। বিএসএফ এবং আধাসামরিক বাহিনীর কুইক রেসপন্স টিম মোতায়েন করে সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান ঠেকানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

রাফাল যুদ্ধবিমান ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার

শুধু স্থলসীমান্ত নয়, আকাশ পথেও নিরাপত্তা বলয় জোরদার করেছে ভারত। হাসিমারা ও বাগডোগরা বিমান ঘাঁটিতে অতিরিক্ত যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি আরও ২৬টি রাফাল কেনার জন্য ২৮ এপ্রিল ফ্রান্সের সঙ্গে নতুন সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ফলে শিলিগুড়ি আকাশে নিয়মিত রাফালের গর্জন এখন পরিচিত দৃশ্য।

উত্তেজনার কেন্দ্র ‘চিকেন নেক’ করিডোর

সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ভারতের উত্তরবঙ্গের ‘চিকেন নেক’ নামে পরিচিত শিলিগুড়ি করিডোর। বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যবর্তী মাত্র ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই করিডোর ভারতের মূল ভূখণ্ডকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করে। এই করিডোরে সামান্য বিঘ্ন ঘটলেও ভারতের অরুণাচল, আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম ও ত্রিপুরার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। সেই কারণে করিডোরে প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে।

শিলিগুড়ি করিডোরজুড়ে সেনাবাহিনী, আসাম রাইফেলস এবং আধাসামরিক বাহিনীর কঠোর তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। প্রতিটি চেকপোস্টে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি, স্ক্যানিং এবং গোয়েন্দা অনুসন্ধান।

আন্তর্জাতিক দৃষ্টি এখন সীমান্তে

ভারতের অভ্যন্তরে এধরনের নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক পরিসরেও সীমান্ত অঞ্চলের প্রতি দৃষ্টি বাড়ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিষয়টিকে নজরদারির দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যবেক্ষণ করছে। বিশেষ করে ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলো বাংলাদেশ সীমান্ত হয়ে জঙ্গি অনুপ্রবেশের সম্ভাবনার ওপর জোর দিচ্ছে।

মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান অঞ্চলে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অস্থিরতার জন্যও বাংলাদেশ সীমান্ত হয়ে জঙ্গি চলাচলের অভিযোগ এনেছে নিরাপত্তা বাহিনী। যদিও এসব অভিযোগের পেছনে নিরপেক্ষ প্রমাণ এখনো উপস্থাপন করা হয়নি, তবুও ভারতের নিরাপত্তা মহলে এই সন্দেহ থেকেই নতুন ধরনের তৎপরতা শুরু হয়েছে।


 

কাশ্মীরের পহেলগাঁও হামলার পর ভারতীয় নিরাপত্তা মহলের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন এসেছে। এখন শুধু পাকিস্তান নয়, বাংলাদেশ সীমান্তও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারির প্রেক্ষাপটে সীমান্তজুড়ে বাড়ছে নজরদারি, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সামরিক কৌশল।

পরিস্থিতি যদি এমনভাবেই এগোয়, তাহলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রাজনীতি ও কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আগামী দিনে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে—যেখানে নিরাপত্তাই হয়ে উঠবে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার কেন্দ্রবিন্দু।

Ingen kommentarer fundet


News Card Generator