বাংলাদেশকে বিনিয়োগের স্বর্গরাজ্যে রূপান্তরের অঙ্গীকার এনসিপির
দেশের আর্থিক উন্নয়ন ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে এক সাহসী অবস্থান নিয়েছে ন্যাশনাল কনসেনসাস পার্টি (এনসিপি)। রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত বিনিয়োগ সম্মেলনে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ঘোষণা দিয়েছেন, বাংলাদেশকে ব্যবসাবান্ধব রাষ্ট্রে পরিণত করতে এনসিপি সরকারে গেলে গ্রহণ করবে ফলপ্রসূ পদক্ষেপ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,
“বাংলাদেশকে আমরা বিনিয়োগের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করতে চাই। দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আমরা নিশ্চিত করব ওয়ান–স্টপ সল্যুশন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে মুক্ত একটি কাঠামো, এবং বিনিয়োগবান্ধব রাজনৈতিক পরিবেশ।”
এই বক্তব্য আসে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত তিন দিনের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রেক্ষাপটে। সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত, যেখানে অংশ নেয় এনসিপির চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।
১৫ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা ও র্যাঙ্কিং উন্নয়ন
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেন,
“বর্তমানে আমাদের বার্ষিক এফডিআই ফ্লো ১.৩ বিলিয়ন ডলার। আমাদের লক্ষ্য এটিকে ১৫ বিলিয়ন ডলারে রূপান্তর করা। পাশাপাশি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৫০–এ নিয়ে আসার লক্ষ্য নিয়েছি আমরা।”
তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে যে ভঙ্গুর করে দেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে চাইলে শুধু রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিই যথেষ্ট নয়—প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ। আর সে প্রতিশ্রুতি এনসিপির পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
নবায়নযোগ্য শক্তি ও সুনীল অর্থনীতি
বিশ্বব্যাপী আলোচিত নবায়নযোগ্য শক্তির বিষয়েও জোর দিয়েছে এনসিপি। প্রতিনিধিদল জানায়,
“আমরা নবায়নযোগ্য শক্তিতে দেশের কনট্রিবিউশন ৩০ শতাংশে উন্নীত করতে চাই। পাশাপাশি কৃষিপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা এবং সুনীল অর্থনীতিকে জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করছি।”
সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনার বিষয়েও আলোচনা হয়। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল, সমুদ্রসম্পদ ও সামুদ্রিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে বৈশ্বিক মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান শক্ত করার কথাও জানায় প্রতিনিধিদল।
মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কর্মসংস্থান পরিকল্পনা
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে বলেন,
“আমরা মধ্যপ্রাচ্যের বিনিয়োগকারীদের আমাদের মাদ্রাসা ব্যবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। বিশেষ করে আরবি ভাষায় দক্ষ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক বাজারে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে এনসিপি কাজ করে যাচ্ছে।”
এটা বাংলাদেশের বেকারত্ব কমানোর একটি কার্যকর উপায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি
বিনিয়োগকারীরা রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা নিয়েও খোলাখুলি কথা বলেন নাসীরুদ্দীন।
“সরকার এবং বিরোধী দল—উভয়েই রাষ্ট্রের অংশ। আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, রাজনৈতিক দল হিসেবে সব সময়ই ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখব।”
তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্পষ্ট করেন, এনসিপি কখনোই হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির মাধ্যমে ব্যবসার পরিবেশ বিঘ্নিত করবে না।
উপহাস নয়, প্রয়োজন সম্মিলিত প্রয়াস
রাজনৈতিক বিরোধিতা নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন,
“আমরা লক্ষ করেছি, যখন সম্মেলনে মানুষ আশাবাদী, তখন কিছু রাজনৈতিক নেতা তা নিয়ে ব্যঙ্গ করেছে। আমরা তাদের বলি—এটা উপহাসের সময় নয়, বরং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উত্তরণের পথে একসাথে হাঁটার সময়।”
উপস্থিত ছিলেন দলের শীর্ষ নেতারাও
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম, যুগ্ম সদস্যসচিব সাগুফতা বুশরা মিশমা এবং যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল ফয়সাল।
এনসিপির পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা—বাংলাদেশ শুধু রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার মাঠ নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতির একজন প্রতিযোগী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে প্রস্তুত। সেই লক্ষ্যে বিনিয়োগের স্বর্গভূমি গড়ার এই অঙ্গীকার কতটা বাস্তবায়ন হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়
 'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  
  
 
		 
				 
			



















 
					     
			 
						 
			 
			 
			 
			 
			 
			