গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের দিল্লিতে আশ্রয় নিয়ে পালিয়ে যান। এরপর থেকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সাবেক নেতারা ভারতের মাটিতে বসে, দেশের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নানা সামাজিক অপরাধের ইস্যুকে – ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন, রাহাজানি সহ – হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বাম রাজনৈতিক দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোকে পরিকল্পিতভাবে মাঠে নামাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে।
বিশ্লেষকদের মতে, দেশের বিভিন্ন প্রামাণ্য এলাকা যেমন ঢাকার শাহবাগ, জাতীয় জাদুঘর প্রাঙ্গণ, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, জাতীয় প্রেস ক্লাব ও পল্টন মোড়ের মতো স্থানে বামপন্থিদের পক্ষ থেকে গণমিছিল ও আন্দোলনের আয়োজন চলছে। এসব স্থানেই জনসাধারণের আস্থা ও নৈতিকতা ভেঙ্গে দিতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান,
- ধর্ষণ ইস্যুকে অস্ত্র বানানো: সামাজিক অপরাধের নানা ঘটনা সামনে এনে বাম দলের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। এতে জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি দেশের শাসনব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
- বিদেশি অর্থের জোগান: অভিযোগ উঠেছে, দেশের বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় অর্থের সরবরাহ দিয়ে এই আন্দোলনকে চালিত করা হচ্ছে, যা দেশের স্বাধীনে প্রভাব ফেলতে পারে।
গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাম দলের মধ্যে পুরোনো বিভক্তি রয়েছে। তিনি বলেন,
"কিছু বাম দল অতীতেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল, আবার কিছু বিএনপির সাথে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। তাই ঢালাওভাবে সবাইকে এক পাল্লায় মাপা যাবে না।"
তবে তিনি স্বীকার করেন, বর্তমানে বহু বামপন্থি সংগঠন ও দলের সহায়তায় আন্দোলন আকার নিয়েছে, যা সরাসরি শেখ হাসিনার পলাতক নেতাদের কার্যক্রমের সাথে যুক্ত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক সরদার রুহিন হোসেন প্রিন্স অভিযোগগুলোকে "কল্পনাপ্রসূত এবং পরিকল্পিত অপপ্রচার" বলে খণ্ডন করেন। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের যে চেতনা দেখা গেল, তার মূলে ছিল বৈষম্যমুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা – মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা।
বলা হচ্ছে, এসব আন্দোলনের পেছনে আমাদের "বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী" রাষ্ট্রের আঙ্গিকও রয়েছে। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে দেশকে অস্থিতিশীল করতে বেছে নেওয়া হয়েছে এমন কিছু নির্দিষ্ট এলাকায়, যেখানে বাম দলের মোড়কে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সাবেক আওয়ামী লীগ নেতাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার পলাতকতা ও তার পরবর্তী প্রভাবশালী নেতাদের ভারতের মাটিতে অবস্থান থেকে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চ্যালেঞ্জ করার ছক কষা হচ্ছে। এর ফলে, গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের শাসনব্যবস্থায় ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
দেশের শাসনব্যবস্থায় বর্তমানে ঘোরাকাঢ় অস্থিরতার পেছনে শিক্ষার্থী ও বামপন্থি সংগঠনগুলোতে পরিকল্পিত আন্দোলনের আয়োজন, বিদেশি অর্থের সহায়তা ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আঙ্গিকের অভিযোগ উঠছে। এ সকল কর্মকাণ্ডের ফলশ্রুতি হিসেবে, শাহবাগ, জাতীয় জাদুঘর, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, প্রেস ক্লাব ও পল্টন মোড়সহ নির্দিষ্ট এলাকা যেমন নির্বাচিত হয়ে উঠেছে।
প্রশ্ন থেকে যায়, এ ধরনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও অস্থিতিশীলতা দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় কীভাবে প্রভাব ফেলবে – এ বিষয়ে ভবিষ্যতে আরও স্পষ্ট তদন্ত ও বিচার প্রয়োজন।



















