সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ছানু মিয়ার হাতে। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি হাত মিলিয়েছেন বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতা আকমল হোসেনের সঙ্গে। রাজনৈতিক বিরোধ থাকলেও এই দুই দলের নেতা-কর্মীরা একত্রিত হয়ে গড়ে তুলেছেন বালু উত্তোলনের শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
কীভাবে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন?
জানা যায়, নারিকেলতলা গ্রামে কৃষি ইনস্টিটিউটের মাঠ ভরাটের জন্য সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রীর ভাগ্নে জাবেদ মিয়া ইজারা পান। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সিন্ডিকেট কৃষি ইনস্টিটিউট ছাড়াও বাগময়না গ্রাম রক্ষা প্রকল্পসহ অন্যান্য জায়গায় বালু বিক্রি করছে। ইজারার মেয়াদ ১২ ফেব্রুয়ারি শেষ হতে চলেছে, তাই দ্রুত গতিতে চলছে বালু উত্তোলনের কাজ। অথচ প্রশাসন এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের নাম ফাঁস!
এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন রানীগঞ্জ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা ছানু মিয়া ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক আকমল হোসেন। তাদের সহযোগিতা করছেন শেরপুরের ইমরান মিয়া, সোনাতলা গ্রামের আল আমিন ও ফেচী গ্রামের জিতু মিয়া। অভিযোগ উঠেছে, এই অপকর্ম টিকিয়ে রাখতে স্থানীয় প্রশাসনের কিছু ব্যক্তিকেও ম্যানেজ করা হয়েছে।
জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ ও প্রশাসনের নীরবতা
পাইলগাঁও ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নজুমউদ্দিন বলেন, ‘মাসিক বৈঠকে বারবার অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়টি উত্থাপন করা হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’ রানীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মো. ছদরুল ইসলাম জানান, ‘এখানে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। আমি প্রতিবাদ করলেও মিথ্যা মামলার শিকার হতে পারি।’
পাইলগাঁও ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আবুল হোসেনের দাবি, সিন্ডিকেটের কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
নদী ভাঙনের শঙ্কা, সাধারণ মানুষের আতঙ্ক
বালিশ্রী গ্রামের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পাড় ভেঙে যাচ্ছে। আমরা সর্বহারা হওয়ার পথে। কিন্তু ক্ষমতাশালীদের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারছি না।’
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য
বাগময়না গ্রাম রক্ষা প্রকল্পের ঠিকাদার স্বপন হাজি জানান, ‘বালু সরবরাহের জন্য আওয়ামী লীগ নেতা ছানু মিয়া ১ লাখ টাকা নিয়েছেন। ইমরান মিয়া, জিতু মিয়া ও আল আমিনের কাছ থেকেও বালু কিনেছি, কিন্তু এখন তারা বালু সরবরাহ করছে না।’
শেরপুরের ইমরান মিয়া ও সোনাতলা গ্রামের আল আমিন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। জিতু মিয়া বলেন, ‘আমি বৈধ-অবৈধ বুঝি না, কিন্তু এখন আর বালু দিচ্ছি না।’
প্রশাসনের টনক নড়বে কবে?
বালু উত্তোলনের এ অনিয়ম নিয়ে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের বারবার অভিযোগ সত্ত্বেও প্রশাসন নির্বিকার। ফলে প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাও কি সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত? স্থানীয়রা প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপ এবং দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
অবৈধ বালু উত্তোলনের এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে, একদিকে যেমন নদীভাঙন ও পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটবে, অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন সত্যিই কোনো পদক্ষেপ নেয় কিনা, নাকি ক্ষমতার যোগসাজশে এ লুটপাট চলতেই থাকবে!
Không có bình luận nào được tìm thấy