close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

বাইডেনের প্রোস্টেট ক্যান্সার শনাক্ত, ধরন ‘গুরুতর’

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যা ইতোমধ্যেই হাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। গ্লিসন স্কোর ৯ হওয়ায় এটি গুরুতর পর্যায়ের ক্যান্সার। তবে ‘হরমোন-সেনসিটিভ’ হওয়ায় চিকিৎসায় আশার আলো দেখছে..

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শরীরে শনাক্ত হলো গুরুতর প্রোস্টেট ক্যান্সার, যা ইতোমধ্যে হাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার এই খবর নিশ্চিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে এবং তার দ্রুত সুস্থতা কামনায় সবাই একসাথে প্রার্থনায় অংশ নেন।

বাইডেনের অফিস জানায়, চলতি বছরের শুরুতে প্রেসিডেন্ট পদ ছেড়ে দেওয়ার পর সম্প্রতি প্রস্রাবজনিত সমস্যার কারণে তিনি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার শরীরে ধরা পড়ে প্রোস্টেট ক্যান্সার, যার গ্লিসন স্কোর ৯ (গ্রেড গ্রুপ ৫)। এ ধরনের স্কোর থাকা মানে ক্যান্সারটি ‘হাই-গ্রেড’ এবং অত্যন্ত আগ্রাসী।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্লিসন স্কোর ৯-১০ হলে সেটিকে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার মতো ক্যান্সার হিসেবে ধরা হয়। এমন ক্যান্সার সাধারণত চিকিৎসায় সাড়া দেয় না এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা নিরাময়যোগ্য নয়। তবে বাইডেনের ক্ষেত্রে কিছুটা আশার কথা হচ্ছে, তার ক্যান্সার ‘হরমোন-সেনসিটিভ’। ফলে হরমোন থেরাপির মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখার সুযোগ রয়েছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে সহমর্মিতা ও দোয়া

বাইডেনের অসুস্থতার খবর সামনে আসতেই মার্কিন রাজনৈতিক অঙ্গন একত্রিত হয়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ট্রুথ সোশাল’-এ এক বার্তায় বলেন, “জো বাইডেনের অসুস্থতার খবর শুনে মেলানিয়া এবং আমি গভীরভাবে ব্যথিত। আমরা জিল ও তাদের পুরো পরিবারের জন্য শুভ কামনা জানাই।”

ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এক্স-এ লিখেছেন, “জো একজন যোদ্ধা। আমি জানি, তিনি তার দৃঢ় মনোভাব, সহিষ্ণুতা ও ইতিবাচক মনোভাব দিয়ে এই চ্যালেঞ্জকেও জয় করবেন।”

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও এক্স-এ এক আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন: “ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাইডেনের অবদান অনস্বীকার্য। আমি নিশ্চিত, এই নতুন চ্যালেঞ্জও তিনি সম্মানের সাথেই মোকাবিলা করবেন। আমরা তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।”

দীর্ঘ সময় ধরে ক্যান্সার যুদ্ধের মুখ

২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওবামার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা বাইডেন ২০১৬ সালে ‘ক্যান্সার মুনশট’ প্রকল্প চালু করেন। ২০২২ সালে এই কর্মসূচিটি আবার শুরু করেন তিনি ও তার স্ত্রী, যার লক্ষ্য ছিল ২০৪৭ সালের মধ্যে ৪০ লাখ ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা।

এ উদ্যোগের পেছনে ব্যক্তিগত বেদনার ইতিহাসও রয়েছে। বাইডেনের জ্যেষ্ঠ পুত্র বো বাইডেন ২০১৫ সালে মস্তিষ্কের ক্যান্সারে মারা যান। সেই সময় থেকেই ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাইডেন সক্রিয় হয়ে ওঠেন।

স্বাস্থ্য নিয়ে জল্পনা

২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন বাইডেন। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি বিতর্কে দুর্বল পারফরম্যান্সের পর সমালোচনার মুখে পড়ে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী হিসেবে জায়গা নেন।

বাইডেনের স্বাস্থ্য নিয়ে গুঞ্জন দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল। তবে মে মাসে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “মানসিক সক্ষমতা হ্রাসের কোনো প্রমাণ নেই।” তিনি দাবি করেন, তিনি সম্পূর্ণভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের মতে, ত্বকের ক্যান্সারের পরই পুরুষদের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যান্সারের হার সবচেয়ে বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (CDC) তথ্যমতে, প্রতি ১০০ জন পুরুষের মধ্যে ১৩ জন কোনো না কোনো সময় প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।

চিকিৎসা ও সম্ভাবনা

আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. উইলিয়াম ডাহুট জানান, বাইডেনের ক্যান্সার হাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে এটি এখন আর নিরাময়যোগ্য নয়। তবে তিনি যোগ করেন, “বেশিরভাগ রোগী প্রাথমিক হরমোন থেরাপিতে ভালো সাড়া দেন এবং দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারেন।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাইডেনের চিকিৎসায় হরমোন থেরাপির পাশাপাশি অন্যান্য সহায়ক থেরাপিও প্রয়োগ করা হতে পারে, যাতে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি থামানো যায় এবং উপসর্গ হ্রাস পায়।

জনসমাগমে অনুপস্থিত বাইডেন

হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর বাইডেন নিজেকে জনসমাগম থেকে অনেকটাই দূরে রেখেছেন। এপ্রিল মাসে শিকাগোতে একটি সম্মেলনে তাকে শেষবারের মতো প্রকাশ্যে দেখা যায়। সেখানে তিনি প্রতিবন্ধী অধিকার সংগঠন ‘অ্যাডভোকেটস, কাউন্সেলরস অ্যান্ড রিপ্রেজেন্টেটিভস ফর দ্য ডিসএবল্ড’-এর আয়োজনে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

সাম্প্রতিক সময়ে বিবিসিকে দেওয়া একটি এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেন, “নির্বাচন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তটি আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তগুলোর একটি ছিল।”


 

জো বাইডেনের প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ার খবর কেবল একজন নেতার অসুস্থতার খবর নয়, বরং এটি আরও বড় পরিসরে ক্যান্সার সচেতনতা এবং মানুষের সহমর্মিতার প্রতিচ্ছবি। ক্যান্সার মোকাবিলায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা একজন নেতার জন্য এখন দেশবাসী ও বিশ্ববাসী একসাথে প্রার্থনা করছে। তার দীর্ঘস্থায়ী সুস্থতা কামনা করি, যেন তিনি তার দৃঢ় মনোবল দিয়ে আবারও এই যুদ্ধ জয় করতে পারেন।

کوئی تبصرہ نہیں ملا