close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

বাড্ডা-সাতারকুল সড়কের বেহাল দশা: জনগণের দুর্ভোগ ও প্রশাসনের উদাসীনতা..

Sumon Hawlader avatar   
Sumon Hawlader
বাড্ডা থেকে সাতারকুল পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশায় জনগণের দুর্ভোগ চরমে। প্রশাসনের উদাসীনতায় ক্ষোভে ফেটে পড়ছে স্থানীয়রা।..

রাজধানী ঢাকার উত্তর বাড্ডা থেকে সাতারকুল ব্রিজ পর্যন্ত সড়কটি এখন স্থানীয় জনগণের জন্য এক কঠিন পরীক্ষার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। খানাখন্দে ভরা এই সড়কজুড়ে প্রতিটি গর্ত যেন একেকটি বিপদসংকেত, যা প্রতিনিয়ত বিপদ ডেকে আনছে। সড়কের এই দুরাবস্থার কারণে যাত্রীদের পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীরাও পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।

 

 সড়কের বেহাল দশা ও জনগণের দুর্ভোগ:

উত্তর বাড্ডা থেকে সাতারকুল পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা এতটাই খারাপ যে, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে যানবাহন চালকরাও পড়েছেন বিপাকে। প্রতিদিনই এই সড়কে চলাচল করতে গিয়ে যাত্রীদের গাড়ির চাকা ভাঙার মতো ঘটনা ঘটছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কটি এমন অবস্থায় রয়েছে যে এটি আর 'রাস্তা' হিসেবে গণ্য করা যায় না। এটি যেন এক অজানা গ্রহের রোভার চালনার অনুশীলনক্ষেত্র।

স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, 'রাস্তা দিয়ে হাঁটলেই জুতায় কাদা, দেহে অস্বস্তিকর ঝাঁকি আর রাগে ফেটে পড়া মাথা—এটাই আমাদের প্রতিদিনের জীবনের অংশ হয়ে গেছে। অথচ রাস্তা সংস্কারের জন্য কোনো উদ্যোগ নেই।'

 

 অটোর দখলে সড়ক:

এই দুর্ভোগের সাথে যোগ হয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোর দখলদারিত্ব। রাস্তার একপাশ প্রায় পুরোপুরি দখল করে রেখেছে এই যানবাহনগুলো। স্থানীয় এক অটোচালক আব্দুল মান্নান বলেন, 'ভাই, আমরা বেশি সময় থাকি না। যাত্রী উঠতে যতক্ষণ লাগে ততক্ষণ থাকি। আমরা গরিব মানুষ, সংসার চালাতে হয়।'

অটোর এই অবস্থানের কারণে ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। দোকানের সামনে সারি সারি অটো পার্কিং হওয়ায় ব্যবসা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এক দোকানদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'এইভাবে দোকানের সামনে অটো রাখলে কাষ্টমার তো ঢুকতেই পারে না। অথচ মাসে বিশ হাজার টাকা ভাড়া দিচ্ছি!'

 

 শিক্ষার্থীদের জন্য আতঙ্কের আরেক নাম অটো:

শিক্ষার্থীদের জন্য এই সড়ক যেন আরেক আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে। অটোর গতি নিয়ন্ত্রণহীন, ফলে অনেক সময়ই শিক্ষার্থীদের ধাক্কা লাগার ঘটনা ঘটে। কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, নেই কোন শৃঙ্খলা।

বিশেষ করে উত্তর বাড্ডার প্রধান বাজারসংলগ্ন সড়কটি সবচেয়ে সংকটাপন্ন। রাস্তার দুপাশে পাইকারি দোকান, যাদের মালামাল আনা-নেওয়ার প্রধান বাহন এই ব্যাটারিচালিত অটো ও অটো রিকশা। অথচ এই রিকশাচালকরা রাস্তা নিজের জমি মনে করে বসে থাকে। পথচারীরা নড়তে পারে না ডানে, না পারে বাঁয়ে। পথচারী রানার ভাষায়, 'মানুষ যেন রিকশার কাছে বন্দি! আমরা কী রাস্তা দিয়ে চলবো, না কি আকাশ দিয়ে চলবো?'

 

 প্রশাসনের উদাসীনতা ও উন্নয়নের অভাব:

স্থানীয়দের দাবি, এই রাস্তার অবস্থা বছরের পর বছর একই আছে। নির্বাচন এলেই আশ্বাস মেলে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। এখন বর্ষা মৌসুমে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে—রাস্তার গর্ত পানিতে ঢাকা পড়ে গিয়ে ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা।

সাতারকুল, উত্তর বাড্ডা, আলীর মোড়, পুরাতন থানা রোড, পূর্বাচল সড়ক, আব্দুল্লাহ বাগ , জি এম বাড়ি, এই এলাকার মানুষ এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। অথচ এই একটি রাস্তাই যেন উন্নয়নের 'বিচ্ছিন্ন দ্বীপ'।

 

 ভবিষ্যৎ প্রভাব ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ:

এই সড়কটির উন্নয়ন ছাড়া এলাকাবাসীর দুর্ভোগের কোনো সমাধান নেই। প্রশাসনের উচিত দ্রুত এই সড়কের মেরামত ও উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা। পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত অটোর নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

সরকারি উদ্যোগ ও স্থানীয় জনগণের সমন্বয়ে এই সড়কের দুরাবস্থা নিরসন করা সম্ভব। তবে তার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ।

Nema komentara