close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

বাড্ডায় বিদ্যুৎ চুরির চার্জিং গ্যারেজ সাম্রাজ্য: প্রশাসনের নীরবতা..

Sumon Hawlader avatar   
Sumon Hawlader
ঢাকার বাড্ডায় বিদ্যুৎ চুরির মাধ্যমে গড়ে উঠেছে বিশাল চার্জিং গ্যারেজ সাম্রাজ্য, প্রশাসনের নীরবতায় নগরবাসী দুর্ভোগে। ছবি, লেখক....

সুমন হাওলাদারঃ

আধুনিক বিদ্যুৎ ডাকাতির নতুন ঠিকানা: বাড্ডা

ঢাকার বাড্ডা এলাকায় বিদ্যুৎ চুরির মাধ্যমে গড়ে উঠেছে একটি বিশাল চার্জিং গ্যারেজ সাম্রাজ্য, যেখানে গৃহস্থালির সংযোগ ব্যবহার করে চলছে শত শত চার্জিং গ্যারেজ। দিনে-রাতে চার্জ হচ্ছে হাজার হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটো। কোনো লাইসেন্স নেই, নেই কোনো অনুমোদন—তবু চলছে কোটি টাকার বাণিজ্য।

বিভ্রান্তিকর ব্যবহারের চিত্র

আবাসিক মিটারে সংযোগ, কিন্তু ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বাণিজ্যিক। এতে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে অতিরিক্ত লোড পড়ে বিদ্যুৎ সিস্টেমে। এর ফলে লোডশেডিং, বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা বাড়ছে।

বাড্ডা থেকে বেরাইদ: এক বিশাল ‘চার্জিং বেল্ট’

মেরুল বাড্ডা, মধ্যে বাড্ডা, দক্ষিণ ও উত্তর বাড্ডা, সাতারকুল এবং বেরাইদ—পুরো অঞ্চলটাই রূপ নিয়েছে “চার্জিং গ্যারেজ বেল্ট”-এ। এখানকার গ্যারেজগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ৫০টির বেশি রিকশা চার্জ হয়।

রিকশা প্রতি চার্জ ফি: ১০০–১২০ টাকা (প্রতিদিন)

মাসিক ফি: ৩,০০০–৩,৫০০ টাকা

রসিদ: নেই

সংযোগ: বাসাবাড়ির লাইন

গোপন হিসাব: কোটি টাকার চার্জ ব্যবসা

একটি গ্যারেজের গড় আয় হিসেবেই দেখা যাচ্ছে মাসে লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

প্রতিদিন: ৫০ রিকশা × ১০০ টাকা = ৫,০০০ টাকা

মাসে: ৫,০০০ × ৩০ = ১,৫০,০০০ টাকা

১০০ গ্যারেজ × ১.৫ লাখ = মাসিক আয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা**

এই বিশাল পরিমাণ অর্থের কোনো কর দাখিল নেই, নেই সরকারি তত্ত্বাবধান।

গৃহস্থালি লাইন + ইন্ডাস্ট্রিয়াল লোড = দাহ্য পরিস্থিতি

এসব চার্জিং গ্যারেজগুলোতে বাসাবাড়ির তার দিয়ে চালানো হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল মানের ব্যাটারি চার্জার। এতে শুধু লোডশেডিং নয়, বিদ্যুৎ বিভ্রাট, শর্টসার্কিট এবং অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা দিনে দিনে বাড়ছে। বিদ্যুৎ নিরাপত্তা আইনের ধারা অনুযায়ী এ ধরনের কার্যক্রম গুরুতর অপরাধ, কিন্তু বাস্তবে এদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেই।

চালকেরা বন্দি, নেই রসিদ বা বিকল্প

উত্তর বাড্ডার এক রিকশাচালক মতিন বলেন,

আমরা তো মালিক না, গ্যারেজে রেখে চার্জ দিতে হয় এবং টাকা দিতে হয়। কোথায় যায় সেই টাকা জানি না, শুধু শুনি—‘এটাই নিয়ম’। ব্যাটারি চার্জ করলে রশিদ লাগে না।

নিয়মহীনতার এই জালে রিকশাচালকেরা বাধ্য হয়ে চলতে বাধ্য হচ্ছে।

 রাস্তায় ‘চার্জড’ বিশৃঙ্খলা

এই গ্যারেজ থেকেই প্রতিদিন রাস্তায় নামে হাজার হাজার ব্যাটারিচালিত অটো ও রিকশা। যানজটে নাকাল হয় নগরবাসী। ট্রাফিক আইন, পার্কিং নিয়ম কিংবা সিগন্যাল মানার বালাই নেই।

কবরস্থান রোডের এক বাসিন্দা জাকির হোসেন- বলেন,

ওরা শুধু বিদ্যুৎ না, আমাদের শান্তিও চুরি করছে প্রতিদিন।

প্রশাসনের ভূমিকা: রহস্যে ঘেরা নীরবতা

বিদ্যুৎ বিভাগ, ট্রাফিক বিভাগ কিংবা সিটি কর্পোরেশন—কোনো পক্ষই মুখ খুলছে না। প্রতিবাদ করলে গ্যারেজ মালিকদের কৌতুকমিশ্রিত জবাব:

আমরা তো সবাইকে দিয়েই চলি ভাই।

‘সবাই’ মানে কে? বোঝা কঠিন নয়।

আইন অন্ধকারে, চার্জ গ্যারেজ উজ্জ্বল আলোয়

সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী বাসাবাড়ির সংযোগ ব্যবহার করে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বিদ্যুৎ ব্যবহার আইনগতভাবে দণ্ডনীয়। তবুও বিদ্যুৎ বিভাগ যেন জানে না—এই গ্যারেজগুলো দিনে-রাতে একেকটা ইলেকট্রিক পাওয়ার প্ল্যান্টের মতো কাজ করছে।

প্রশ্নগুলো রয়ে গেছে...

কেন বাসাবাড়ির লাইনে এমন লোড চালানো হচ্ছে? কেন বিদ্যুৎ বিভাগ এসব গ্যারেজ মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? এই কোটি টাকার বাণিজ্যের ভাগ কে পাচ্ছে? আর কতদিন এই 'অন্ধকার অর্থনীতি' চলবে?

 শেষ কথা: আইন জেগে উঠবে কবে?

চোখের সামনে শত শত গ্যারেজে বিদ্যুৎচুরি চলছে, অথচ প্রশাসন নিশ্চুপ। এটা কি গাফিলতি, না নীরব অংশীদারিত্ব? সরকার ও প্রশাসনের উচিত এখনই পদক্ষেপ নেওয়া। নইলে শুধু বিদ্যুৎ নয়, পুড়বে জনগণের আস্থা ও রাষ্ট্রের নীতিশক্তি।

Комментариев нет


News Card Generator