রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বিড়ালদহ গ্রামে শোকের ছায়া। নির্যাতনের দীর্ঘচার মাস পর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন অলিউজ্জামান ওরফে মন্টু (৫৫), যিনি ছিলেন নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের বানেশ্বর ইউনিয়ন শাখার সভাপতি এবং সাবেক এমপি আবদুল ওয়াদুদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।
আজ শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরিবারের সদস্যরা জানায়, তার মরদেহ ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে আনা হচ্ছে এবং এলাকায় মাইকিং করে জানানো হচ্ছে তার মৃত্যুর খবর।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন অলিউজ্জামান। দীর্ঘ সময় আত্মগোপনে থাকার পর ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি রাতে তিনি নিজ বাড়িতে ফেরেন। পরদিন ৪ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে চা খেতে পাশের মাইপাড়া বাজারে গেলে একদল দুর্বৃত্ত তাকে ধরে নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে তাকে বিড়ালদহ বাজার সংলগ্ন নন্দনপুর সড়কে একটি বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে রাখা হয়। সেদিনের ঘটনার ভয়াবহতা এখনো গ্রামবাসীর মুখে মুখে।
নির্যাতনের নেতৃত্বে কারা ছিলেন?
অলিউজ্জামানের ভাতিজা আবু হানিফ সুজা জানান, স্থানীয়ভাবে জানা যায়—এই হামলার নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মিঠুন, আহসান ও সীমান্ত। তিনি আরও জানান, তার চাচা ঘটনার পর থেকেই মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং দীর্ঘ চিকিৎসার পর ঢাকায় মারা যান।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে মিঠুন দাবি করেন, আহসান ও সীমান্ত ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। তারা নির্দোষ।
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
ঘটনার পর পরিবার পুঠিয়া থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ অভিযোগ নেয়নি বলে দাবি করেছে পরিবার। পুঠিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, তারা ঘটনার কথা শুনে ঘটনাস্থলে যান এবং আহত অবস্থায় অলিউজ্জামানকে প্রথমে পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
তবে তিনি দাবি করেন, কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজ শুক্রবার বিকেলে যখন তার মৃত্যুর বিষয়ে ওসির কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি বলেন, ‘আমি এখনো মৃত্যুর খবর জানি না। কেউ এখনো এসে মামলা করেনি।’
ন্যায়বিচার কোথায়?
চার মাস আগে যেভাবে প্রকাশ্যে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নির্যাতন করা হয়েছিল, তাতে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। অথচ আজও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি, মামলা হয়নি—এমনকি ঘটনার বিচার প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি।
এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সাধারণ মানুষ। পরিবার জানিয়েছে, সুযোগ পেলে তারা আদালতের শরণাপন্ন হবেন।
একজন শিক্ষক, রাজনৈতিক কর্মী ও এলাকার পরিচিত মুখ—অলিউজ্জামান মন্টুর মৃত্যু শুধুই একজন ব্যক্তির মৃত্যু নয়; এটি একটি বিচারহীনতার নির্মম দলিল হয়ে রইল। স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা আবারও প্রকাশ পেল এই ঘটনায়।



















