২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন না হলে আজকের কোনো গণঅভ্যুত্থান হতো না বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন। মঙ্গলবার (১ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন (২০১৮-২০২৪)’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
রাশেদ খাঁন বলেন, “২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন না হলে এই দেশে কোনো গণঅভ্যুত্থান হতো না। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলন নামটি আজ আর শোনা যায় না। মনে হচ্ছে গণঅভ্যুত্থান আসমান থেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। আমি যদি আজকের দিনে আন্দোলনে অংশ নিতাম, হয়তো গ্রেপ্তার হতাম। এর আগে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী হামলার শিকার হয়েছেন, আর মুক্তির দাবিতে রাজপথে নেমে অসংখ্য শিক্ষার্থী রক্তাক্ত হয়েছেন। কিন্তু ইতিহাস বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যা আমাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছে।”
তিনি আরও বলেন, “গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সবার কৃতিত্ব স্বীকার করতে হবে এবং ঐক্য বজায় রাখতে হবে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তির মধ্যে বিভাজন হলে আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে, যা বিপ্লবীদের জন্য ভয়ংকর।”
রাশেদ খাঁনের এই বক্তৃতায় তিনি সবাইকে সহনশীলতা এবং আন্তরিকতার সঙ্গে ঐক্য গঠনের আহ্বান জানান। “ঐক্য কেউ একলা চাইলে সম্ভব নয়, সবার আন্তরিকতা দরকার। এভাবেই আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারব,” তিনি যোগ করেন।
আলোচনা সভার সঞ্চালনায় ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য মাহফুজুর রহমান খান। সভায় বক্তব্য রাখেন পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, মুখপাত্র ফারুক হাসান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, এবং অন্যান্য নেতারা।
বক্তারা সবাই কোটা আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হওয়া গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্ব এবং বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তারা বলেন, বর্তমান সময়ে দেশের সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে একত্রিত করে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে।
সভায় শ্রমিক অধিকার, যুব অধিকারসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন।
২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল দেশের শিক্ষার্থী ও যুব সমাজের মধ্যে ব্যাপক উন্মাদনা ও সক্রিয়তার মূল উৎস। এই আন্দোলন কেবলমাত্র শিক্ষাগত কোটা সংস্কারের দাবি নয়, বরং পরবর্তী সময়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে। রাশেদ খাঁনের মতে, ওই আন্দোলনই ছিল বর্তমান গণঅভ্যুত্থানের বীজ।
আলোচনা সভায় তিনি জানান, ঐ আন্দোলনের সময় রাজপথে নেমে অনেক শিক্ষার্থী আর নেতাকর্মী পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত ও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এই সংগ্রামের মাধ্যমে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের দাবিতে যুবসমাজের মধ্যে এক অভূতপূর্ব ঐক্য সৃষ্টি হয়।
তবে বর্তমানে ঐ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। এটি বাধা দেয় গণঅভ্যুত্থানের প্রকৃত সার্থকতা এবং ঐক্যের পথে।
রাশেদ খাঁন আরো বলেন, “আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হলে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারে, যা বিপ্লবীদের জন্য বিপদসঙ্কেত।”
তিনি সভায় উপস্থিত সবাইকে রাজনৈতিক সহনশীলতা ও আন্তরিকতা বজায় রাখার আহ্বান জানান। শুধুমাত্র এভাবেই দেশের গণতান্ত্রিক পরিবর্তন সম্ভব হবে।
সভায় অন্যান্য নেতৃবৃন্দও কোটা আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, যুব ও শ্রমিক অধিকারসহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক ও সামাজিক সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
২০১৮ সালের কোটা আন্দোলন থেকে শুরু হয়ে আজকের গণঅভ্যুত্থান রাষ্ট্র সংস্কারের বড় মঞ্চ হিসেবে কাজ করছে। এ ঐতিহাসিক আন্দোলনের স্মৃতি ও কৃতিত্ব সংরক্ষণ করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক সহনশীলতা ছাড়া নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ সম্ভব নয়, এ বার্তা দেওয়া হয়েছে আলোচনাসভায়।



















